দুর্গাপুরের প্রায় দুশো বছরের পুরানো জাগ্রত বীরভানপুর দক্ষিণাকালী মায়ের মহাশ্মশানের চিতা কখনও নেভে না। একসময় দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় মানুষ কাঠ কেরোসিন সহযোগে দাহ ক্রিয়া সম্পন্ন করতেন। কিন্তু দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী সময়ে পরিবেশ দূষণ রোধে শিল্পাঞ্চলের মানুষের দাহ কার্য একমাত্র এই বীরভানপুর মহাশ্মশানেই শুরু হয়। প্রথমে কাঠ দিয়ে দাহকাজ হলেও বর্তমানে বীরভানপুর মহাশ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লিতেই দাহকাজ সম্পন্ন করা হয়। সেই বৈদ্যুতিক চুল্লির আগুন সবসময়ই জ্বলছে। চিতা না জ্বললে মায়ের ভোগ নিবেদন হয় না বলে কথিত আছে। তাই মায়ের ইচ্ছাতেই বীরভানপুর মহাশ্মশানে চুল্লি সর্বদাই জ্বলতে থাকে বলে দাবি মন্দিরের পুরোহিতদের।
বীরভানপুর মহাশ্মশানের জাগ্রত দক্ষিণাকালী মা বৈষ্ণব মতে পূজিত হন। একসময় ভবানী পাঠক দামোদরের তীরে এই মন্দিরে মায়ের আরাধনা করতেন বলে দাবি মন্দিরের বর্তমান প্রধান সেবাইত শ্যামল আচার্যের। তিনি বলেন, ‘একসময় নেপালের বাসিন্দা মেঘনাথ ব্রক্ষ্মচারী মহারাজ স্বপ্নাদেশ পেয়ে নাকি দামোদর তীরে বীরভানপুরে মায়ের পুজার্চনা শুরু করেছিলেন। পরে দামোদরের তীরে দুর্গম জঙ্গলে ঘেরা এই বীরভানপুর মহাশ্মশানে দক্ষিণাকালী মায়ের আরাধনা করতেন ভবানী পাঠক। পরবর্তী সময়ে এই মন্দিরের দক্ষিণাকালী মা আমাদের পূর্বপুরুষ অনাথ আচার্য, দক্ষিণেশ্বর আচার্য দ্বারা পূজিত হন। এখন আমি আচার্য বংশের উত্তরসূরি হিসাবে মায়ের প্রধান সেবাইত। মায়ের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। বৈষ্ণব মতে মায়ের পুজো হয়। প্রতিদিন নিত্যপুজো হয়। প্রতি অমাবস্যায় নিশিরাতে মায়ের বিশেষ পুজো ও হোমযজ্ঞ হলেও রটন্তি অমাবস্যায় মায়ের বাৎসরিক মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন প্রচুর ভক্ত সমাগম হয় বীরভানপুর মহাশ্মশান প্রাঙ্গণে। সেদিন প্রচুর ভক্ত জাগ্রত মায়ের কাছে মনস্কমানা পূরণে সংযম পালন করে আরাধনা করেন। পুজা সম্পন্ন হলে প্রসাদ গ্রহণ করে উপবাস ভঙ্গ করেন তাঁরা।’ মন্দিরের ভিতরে প্রাচীন পঞ্চমুন্ডি আসন রয়েছে। এখানেই ভবানী পাঠক মায়ের আরাধনায় বসতেন বলে জানা যায়। পরবর্তী সময়ে মাতৃ আরাধনায় এই পঞ্চমুন্ডি আসনে বসেছেন অনেক মাতৃসাধক বলে জানা যায়। আজও সেই পঞ্চমুন্ডি আসন বিরাজমান এই মন্দিরের আঙ্গিনায়।