অদম্য জেদ, অ্যাডভেঞ্চারের মানসিকতা ও নিজের ১০০সিসি বাইককে সঙ্গী করে সিকিমের শেষ প্রান্তের সুউচ্চ পর্বতমালায় চোলামু হ্রদ পৌঁছে নজির গড়লেন দুর্গাপুরের ছেলে সিকান্দার আলি। মাত্র ১০০সিসি’র বাইক নিয়ে ১৮০০০ ফুট উচ্চতায় ওঠার দুঃসাহস দেখিয়ে সকলকে চমকে দিলেন দুর্গাপুরের এই অ্যাডভেঞ্চার রাইডার। দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গী কালী বাড়ির ঠিক পাশেই থাকেন সিকান্দার আলি।
জানা গেছে, সিকান্দার একসময় দুর্গাপুরের নামি ফুটবলার ছিলেন। রাজ্যস্তরেও ফুটবল খেলেছেন একসময়। ভাল খেলাধুলা করেও কোন সরকারি চাকরি না পাওয়ায় একসময় অনেকটাই ভেঙে পড়েন সিকান্দার। এরপর সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের সময় সিকান্দার দুর্গাপুর থানায় পুলিশের কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে যোগ দেন। সেই চাকরি ভালো না লাগায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে পারিবারিক ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত করেন সিকান্দার।
অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় সিকান্দার আলি বুকের অদম্য সাহসকে সঙ্গী করে বরাবর বিভিন্ন ছোটখাটো রাইডে অংশ নিয়েছেন, তবে নামি দামি কোম্পানির বেশি হর্সপাওয়ারের ভারি বাইকে নয়, নিজের হালকা বাজাজ ১০০সিসি পুরানো বাইকে। অন্যান্যরা যখন বেশি শক্তি সম্পন্ন বাইকে অ্যাডভেঞ্চার রাইডে যান তখন নিজের হালকা ১০০সিসি বাইকে স্বল্প খরচে বিভিন্ন জায়গায় সিকান্দার রাইড করে উপহাসের পাত্র হয়েছেন। এতেই ঝুঁকি নিয়ে ১০০সিসি বাইকে সুউচ্চ দুর্গম জায়গা জয়ের স্বপ্ন মনে চেপে বসে দুর্গাপুরের সিকান্দার আলির। এরপর স্বপ্ন পূরণে পূর্ব সিকিমের শেষ প্রান্ত চীনের বর্ডারের সন্নিকটে ভারতীয় ভূখন্ডের ১৭৮০০ফুট উচ্চতায় গুরুদোংমার লেক ও প্রায় ১৮০০০ফুট উচ্চতায় চোলামু বা তোশালামু লেক যাওয়ার লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগপতি ও সংস্থার কাছে দরবার করে ব্যর্থ হন বলে জানান সিকান্দার আলি। এরপর ছেলের স্বপ্ন পূরণে সিকান্দারের মা আবেদা বেগম নিজের জমানো সাত হাজার টাকা ছেলে সিকান্দারের হাতে তুলে দেন। মায়ের আশীর্বাদ ও মাত্র ৭ হাজার টাকা এবং নিজের প্রিয় ১০০সিসি বাজাজ বাইক নিয়ে ১৬মে গুরুদোংমার ও চোলামুর উদ্যেশ্যে পানাগড়ের দার্জিলিং মোড় ধরে দার্জিলিং হয়ে সিকিমের গ্যাংটক পৌঁছান সিকান্দার।
সেখান থেকে সিকিমের লাচেন পৌঁছানোর আগে সিকিমের শেষ প্রান্তের পেট্রোল পাম্প ম্যানগনে বাইকের ট্যাঙ্ক ফুল করে অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে আপন লক্ষ্যে দুর্গম সুউচ্চ রাস্তায় রাইড শুরু করেন সিকান্দার। মাঝে বিভিন্ন চেক পোস্ট ও প্রশাসনিক কর্তাদের লিখিত অনুমতি নিয়ে ১৭৮০০ফুট উচ্চতায় স্বপ্নের গুরুদোংমার লেক পৌঁছান ১০০সিসি বাইক নিয়ে। এর পরেই বুকে অদম্য সাহস নিয়ে জেদি সিকান্দার আলির বাইক পৌঁছয় চোলামু লেক। সেখানে কিছুক্ষণ থেকেই ফের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন সিকান্দার। এরপর টানা বাইক চালিয়ে ১৭মে দুর্গাপুরের বাড়িতে পৌঁছন সিকান্দার।
সিকান্দার বলেন, আমি সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ ‘ইমমোর্টাল রাইডার্স’ গ্রুপের একজন সদস্য। আমি অ্যাডভেঞ্চার রাইড ভালোবাসি। মা-বাবার আশীর্বাদ ও মনের জোর থাকলে যে কোন প্রতিকূলতাকে যে জয় করা যায় আমি এই দুর্গম পথে স্বল্প শক্তির বাইকে রাইড করে এটা উপলব্ধি করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে এই বাইক নিয়েই আমার আরও দুর্গম এলাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। আমি আমার সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ ইমমোর্টাল রাইডার্স-এর নাম আরও উজ্জ্বল করতে চাই। সিকান্দার আলি আরও জানান, তিনি মোট ১৭৪৮ কিমি যাত্রা করেছেন। তার বাইকে পেট্রোল খরচ হয়েছে মাত্র ৩০২০টাকার। সিকান্দার তার ১০০সিসি বাজাজ বাইকের গঠন ও যন্ত্রাংশ অপরিবর্তিত রেখেই এই দুর্গম পথে ১৮০০০ ফুট উচ্চতায় উঠে এক নজির গড়লেন। সিকান্দারের পড়শি ও স্বজন-বন্ধুরা সিকান্দারের এই অদম্য সাহসকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন।