সরকারি স্কুলে দু’মাসের গরমের ছুটি যখন বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকরা সিলেবাস কিভাবে শেষ হবে সেই নিয়ে চিন্তিত তখন বীরভূমের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আতিকুল শেখের কাছে এই দু’মাসের গরমের ছুটি শাপে বর হয়েছে। আতিকুল শেখ গরমের ছুটি কাটাতে আরাম-আয়াসে নয়, অচল সংসারের হাল ধরতে প্রবল দাবদাহ উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুদূর বীরভূম থেকে দুর্গাপুর এসে প্রতিদিন ৬০-৭০ কিলোমিটার সাইকেলে চালিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করছে। একই সঙ্গে আতিকুল নিজের পায়ে দাঁড়াতে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যার পর স্কুলের পড়ায় মনোযোগী হচ্ছে।

আতিকুল শেখ বীরভূমের জয়দেবের জুন বাজার হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। বাড়ি জয়দেবের ছোটচক বর্ণপরিচয় গ্রামে। বয়স মাত্র ১২ বছর। বাড়িতে ৭ বছরের আর এক ভাই আছে। আতিকুলের বাবা নিজাম শেখ রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। বর্তমানে নিজাম শেখ অসুস্থ। নিজাম শেখের পা ফুলে যাওয়ার ফলে তিনি আর ঠিকমত হাঁটাচলা করতে পারেন না। তাই আতিকুলদের সংসার অচল হয়ে পড়েছে। মা বাড়িতে কাঁথা সেলাই করে মাসে মাত্র ৫০০ টাকা আয় করেন। যত দিন গড়াচ্ছে ততই আতিকুলদের সংসার অচল হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে ছোট্ট আতিকুল সংসারের হাল ধরতে বাবা-মা ও ছোট্ট ভাইয়ের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে এবং বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে সাইকেলে চড়ে আইসক্রিম বিক্রি করছে বলে জানা গেছে। বীরভূমের একটি আইসক্রিম ফ্যাক্টরি থেকে প্রতিদিন আইসক্রিম তুলে এনে প্রবল দাবদাহ মাথায় করে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে প্রতিদিন আতিকুল আইসক্রিম বিক্রি করছে।

আতিকুল বলে, ‘তীব্র গরমে আমার হয়ত কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমার প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে আইসক্রিমও বিক্রি হচ্ছে।’ আতিকুলের দাবি প্রতিদিন আইসক্রিম বিক্রি করে আয় হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকা। আতিকুল বলে, ‘সারাদিন আইসক্রিম বিক্রি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে সিলেবাসের পড়াশোনায় নিজেকে নিয়োজিত করি আমি। এই দুই মাসের গরমের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু টাকা জমাতে পারব আমি। স্কুল খুলে গেলে হয়ত এত সময় ধরে আমি আইসক্রিম বিক্রি করতে পারবো না। তবে সময় বের কর আমি এই পেশা থেকে উপার্জিত অর্থে বাবার চিকিৎসা করাবো।’

আতিকুল শেখের বাবা নিজাম শেখ বলেন, ‘আমি আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। তখন সংসার সচল ছিল। আমি অসুস্থ হতেই সব উলোটপালোট হয়ে গেল। আর আমার ছোট্ট ছেলেটা প্রবল গরমে সকালে খালি পেটে বেরিয়ে যখন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে তখন আর অর্থের দিকে তাকাই না। আতিকুলের মুখের দিকে তাকিয়ে আমার দু’চোখ জলে ভরে যায়।’

বর্ধমান ডট কম-এর খবর নিয়মিত আপনার ফেসবুকে দেখতে চান?

Like Us On Facebook