‘লালকি’র খোঁজ দিলেই মিলবে ৫০০০ টাকা পুরস্কার। সোশ্যাল মিডিয়া সহ দুর্গাপুরের বিভিন্ন জায়গায় লালকির ছবি সহ এমনই পোস্টার সাঁটিয়েছেন দুর্গাপুরের এক দম্পতি, ইন্দ্রজিৎ ভট্টাচার্য ও দেবস্মিতা ভট্টাচার্য, তাঁরা বেনাচিতি রামকৃষ্ণ পল্লী এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। লালকি তাঁদের পোষ্য বিড়াল। নিঃসন্তান ওই দম্পতির সন্তানতুল্য পোষ্য হারিয়ে যাওয়ায় তাঁরা কার্যত দিশেহারা। কবে লালকি ঘরে ফিরবে তার প্রহর গুণছেন দম্পতি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইন্দ্রজিৎবাবু একটি বেসরকারি সংস্থার চিফ অ্যাকাউন্টেন্ট ছিলেন। লকডাউনে কর্মচ্যুত হয়েছেন তিনি। তাঁর একটি চোখ দৃষ্টিহীন। তাঁর স্ত্রী দেবস্মিতাদেবী জটিল দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। ব্যায় বহুল তাঁর উন্নতমানের চিকিৎসা হয় ভিন রাজ্যের হাসপাতালে। সংসারে রয়েছে আর্থিক অনটন। একাধিক সমস্যা ও যন্ত্রনার মধ্যেও তাঁরা সন্তানের মত ভালোবাসে ও সেবাযত্ন করে চলেছেন এলাকার পথ সারমেয় সহ বিড়ালদের। কোনও সমাজসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত নন তাঁরা। তাঁদের দাবি, নিজেদের জীবনযুদ্ধে মনোবল বৃদ্ধি করতে ও ইশ্বরের আর্শীবাদ পেতেই তাঁরা পশুপাখি’র সেবায় নিয়োজিত করেছেন নিজেদের।
প্রায় ৫ বছর ধরে রামকৃষ্ণ পল্লী এলাকার পথ সারমেয় ও বিড়ালদের সেবা-যত্ন করে চলেছেন তাঁরা। এলাকার প্রায় ২০ টি বিড়াল ও ১০ টি সারমেয় তাঁদের পোষ্য হয়ে উঠেছে বর্তমানে। তাঁদের প্রত্যেকের নামকরণও করেছেন তাঁরা। অভিযোগ, এলাকার কিছু মানুষ বিড়াল ও সারমেয়গুলির উপর অত্যাচার চালায়। শেষমেশ তাঁরা প্রায় ১৫ টি বিড়ালকে নিরাপত্তা দিতে ঘরের ভিতর ‘ক্যাট হাউস’ তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে জানুয়ারি মাসে লালকি নামের বিড়ালটি নিখোঁজ হয়ে যায়। লালকি’র সন্ধান পেতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করা হয় পুরস্কার। পাশাপাশি পোস্টার ছাপিয়ে আশপাশের এলাকার দেওয়ালে সাঁটানোও হয়।নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় তিন মাস পার হয়ে গেলেও লালকি’র খোঁজ এখনও সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। সন্ধান পেতে লালকি’র ছবি ও বয়স সহ সোশ্যাল মিডিয়া সহ এলাকায় পোস্টার দিয়েছেন।
ইন্দ্রজিৎবাবু বলেন, ‘লালকি আমাদের সন্তান ও খুব আদরের। প্রথমে তার সন্ধান পেতে ২০০০ হাজার টাকা পুরস্কার রেখেছিলাম। এখনও না মেলায় স্ত্রী’র চিকিৎসার টাকা বাঁচিয়ে ৫০০০ টাকা পুরস্কার রেখেছি। রোজগার এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওদের না খাইয়ে আমরা খেতে পারিনা। আমারা নানান সমস্যা ও জটিলতার মধ্যে জীবনযাপন করি। এলাকার বেশকিছু মানুষ সেই সব না বুঝে এই অবলা জীবগুলির উপর অত্যাচার করেন।’ দেবস্মিতাদেবী বলেন, ‘আমি একজন সঙ্গীত শিল্পী। অসুস্থতার কারণে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্বামী দু’বছর আগে করোনাকালে কাজ হারিয়েছেন। খুব আর্থিক সঙ্কটে রয়েছি। এই পরিস্থিতিতে আমার তিন মাসি ও বাপের বাড়ি’র লোকজন চিকিৎসার খরচের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করছেন। তাই এত প্রতিকূলতার মধ্যেও বেঁচে আছি। বিড়াল ও সারমেয়গুলি আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়।’ দুর্গাপুরের একজন বিশিষ্ট পশুপ্রেমী অবন্তিকা শ্যাম রায় বলেন, ‘আমরাও নিখোঁজ বিড়ালটির সন্ধান রাখবো। এছাড়াও ওই এলাকার কোনও মানুষ যদি ওই অসহায় দম্পতি’কে কোনও রকম বিরক্ত করেন তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’