প্রায় ২ বছর ধরে দুই কানের নীচে গলায় ক্যানসারে আক্রান্ত সামিনা খাতুন। কেমো নিতে নিতে মাথার চুলও প্রায় উঠে গেছে। তবুও জীবনসংগ্রামের লড়াইয়ের ময়দান থেকে তাকে সরানো যায়নি। শুক্রবার মাধ্যমিকের ফলাফলে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিল বর্ধমানের জামালপুর থানার রামনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর পরিবারের মেয়ে সামিনা খাতুন। ২০৪ পেয়ে এবারে মাধ্যমিক পাশ করেছে সামিনা। তার এই জীবনসংগ্রামের লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে শুক্রবারই বিকালে তাদের পর্ণকুটিরে ছুটে যান জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি, জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহমুদ খান সহ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুপ্রভাত চক্রবর্তী, জামালপুর থানার ওসি রাকেশ সিং, যুগ্ম বিডিও গৌতম দত্ত, স্কুলের শিক্ষকরাও।
এদিন সামিনার চিকিৎসা ও পড়াশুনার বিষয়ে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কঠিন রোগের সঙ্গে লড়াই করে সামিনা মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ওর সাফল্যের বিষয়টি তাঁদের কাছেও অনুপ্রেরণার। প্রশাসনের তরফ থেকে ওকে সবরকম ভাবে সহযোগিতা করা হবে। সামিনা যাতে সঠিক চিকিৎসা পায় সেই বিষয়টিও তাঁরা দেখার চেষ্টা করবেন।
উল্লেখ্য, রামনাথপুর গ্রামের ছোট দু’কামরার ঘরে সামিনারা সকলেই বসবাস করেন। তার বাবা শেখ আলম পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি। তিনি খেতমজুরের কাজ করেন। মা নূরজাহান বেগম সাধারণ গৃহবধূ। সামিনার দিদি আসলিমা বিবাহিতা। জামালপুরের যুগ্ম বিডিও গৌতম দত্ত জানিয়েছেন, সামিনার জীবন ও সাফল্য অনুসরণ যোগ্য। ওর চিকিৎসা ও আগামী দিনের পড়াশুনার ব্যাপারে যা সাহায্যের প্রয়োজন সেটা তাঁরা করবেন। শুক্রবার বিকালে তিনি সামিনাকে কোনোরকম দুশ্চিন্তা মাথায় না রেখে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছেন।
সামিনার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ছোট বয়স থেকেই লেখাপড়ার বিষয়ে সামিনার আগ্রহ ছিল। এই আগ্রহের জন্যই তার বাবা তাকে ভর্তি করেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে সামিনা ভর্তি হয় স্থানীয় বনবিবিতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই সামিনার শারীরিক অসুস্থতা শুরু হয়। তাকে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্যে। অনেকেই ভেবেছিলেন জামালপুর হাসপাতালের চিকিৎসাতেই সে নিরাময় হবে। কিন্তু বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টে ধরা পড়ে সামিনার মারণ ব্যাধি। পরিবারের চরম আর্থিক সংকটের মাঝেই সাধারণ মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় গত প্রায় তিন বছর ধরে তার ক্যানসার রোগের চিকিৎসা চলছে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম করে সামিনাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কেমোথেরাপি দেওয়া চলছে। তাই মাথার চুল সব উঠে যাওয়ায় সামিনা প্রথমে একটু মুষড়ে পড়ে। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। হতাশাকে দূরে সরিয়ে রেখেই পড়াশুনা চালিয়ে গিয়ে সামিনা এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২০৪ নম্বর পেয়েছে। দুই কানের নীচে গলার অংশে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। চিকিৎসা চলছে ঠিকই, তবে তাঁর শরীর এখন ভালো যাচ্ছে না। শরীরে জ্বর রয়েছে সব সময়। গলায় ব্যাথা থাকায় ভাত গিলে খেতেও অসুবিধা হচ্ছে। তবে কষ্ট যাই থাক, মাধ্যমিক পাশ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে বলে জানায় সামিনা। মাধ্যমিকের পর সামিনার চোখ এখন উচ্চ মাধ্যমিকের ভাল ফলের দিকে।