পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের চৈতন্য মহাপ্রভুর স্মৃতিবিজড়িত কুলীনগ্রামকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগী হল রাজ্য পর্যটন দফতর। তারই অঙ্গ হিসাবে রাজ্যের পর্যটন দফতরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের নির্দেশে রবিবার কুলীনগ্রাম ঘুরে দেখলেন রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ। তাঁর কুলীনগ্রাম ঘুরে যাওয়ার পরই উৎসাহী হয়ে উঠেছে গোটা অঞ্চলের মানুষ।

পূর্ব বর্ধমান জেলার পর্যটন মানচিত্রে বৈষ্ণব তীর্থ কুলিনগ্রামের পুনরুত্থান ঘটাতে স্বপন দেবনাথের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল এদিন কুলিনগ্রাম পরিদর্শন করেন। গ্রামের মানুষজন সহ স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে তাঁরা কথাও বলেন। স্বপন দেবনাথ ছাড়াও প্রতিনিধি দলে ছিলেন জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি, তৃণমূল কংগ্রেসের জামালপুর ব্লক সভাপতি মেহেমুদ খান, জামালপুরের প্রাক্তন বিধায়ক সমর হাজরা প্রমুখ। ছিলেন আবুজহাটি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝর্ণা দাস ও উপপ্রধান শ্যামল চ্যাটার্জিও।

জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি জানিয়েছেন, স্বপনবাবুকে মালাধর বসুর জন্মভিটা, জগন্নাথ মন্দির ও রথ, প্রখ্যাত গোপাল মন্দির, মাসির বাড়ি, যবন হরিদাসের আখড়া দেখানো হয়েছে। অলোকবাবু জানিয়েছেন, এই সব স্থানের সংস্কার, উন্নতিসাধন, সন্নিহিত রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন, পর্যটকদের যাতায়াতের সুবন্দোবস্ত, বিশ্রামগার, পানীয় জল সহ অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নতিতে প্রায় দেড় কোটি টাকার প্রকল্প ব্যায়ের কথা জানিয়েছেন স্বপন দেবনাথ।

উল্লেখ্য, চৈতন্যদেবের পদস্পর্শ পাওয়ার আগেই মালাধর বসুর হাত ধরেই বৈষ্ণব ভক্তিবাদের ধারায় স্নাত হয়েছিল কুলিনগ্রাম। ভক্তকবি গুণরাজ খাঁয়ের শ্রীকৃষ্ণ বিজয় বা গোবিন্দ মঙ্গল কাব্যের হাত ধরেই বৈষ্ণব ধর্মের প্রসার ঘটে বঙ্গে। বাংলা ভাষায় প্রথম ভাগবত অনুবাদ করেন কবি মালাধর বসু। এই স্থানই চৈতন্য অনুরাগী যবন হরিদাসের সাধন স্থল। অলোক মাঝি জানিয়েছেন, তিনি খণ্ডঘোষের বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন ধরেই তিনি চেষ্টা করেছেন দক্ষিণ দামোদরের ইতিহাসকে তুলে ধরতে, পর্যটন মানচিত্রে দক্ষিণ দামোদরকে ঠাঁই দিতে। তিনি জানিয়েছেন, গলসির বিধায়ক হওয়ার পর বিধানসভায় তিনি এই দাবি তুলেছিলেন। গলসির পর জামালপুরের বিধায়ক হিসাবে জয়লাভ করার পরও তিনি এব্যাপারে বিধানসভায় সংশ্লিষ্ট পর্যটন দফতরের মন্ত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। বর্তমানে পর্যটন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকেও তিনি জানিয়েছেন। কেবলমাত্র জামালপুর ব্লকই নয়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে গোটা দক্ষিণ দামোদর অঞ্চলের রায়না ও খণ্ডঘোষ এলাকাতেও রয়েছে প্রচুর ইতিহাস। সেগুলিকে সম্মিলিত করে একটা পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার দাবি তাঁর ছিল। অলোকবাবু জানিয়েছেন, কুলীন গ্রামে বহু বাইরের রাজ্য ও জেলার পর্যটকরা আসেন। কিন্তু তাঁদের থাকার কোনো জায়গা নেই। তাই এখানে হোম-স্টে বা গেস্ট হাউস তৈরী করার দাবি জানিয়েছেন। জন্মাষ্টমী, রাধাষ্টমী,পৌষমাসে ব্যাপক মানুষের ভিড় হয় এই কুলীন গ্রামে। তিনি জানিয়েছেন, একসময় এই কুলীন গ্রাম থেকেই পুরীর রথযাত্রার রশি সরবরাহ করা হত। স্বয়ং মহাপ্রভু চৈতন্যদেব এই কুলীনগ্রামেই ৩দিন কাটিয়ে গেছেন। এছাড়াও রয়েছে বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত ৫টি স্কুল, বেড়ুগ্রামে লোকনাথ বাবার পূর্বজন্মের স্মৃতি, চকদিঘী রাজবাড়ি প্রভৃতিও। এছাড়াও মুণ্ডেশ্বরী ও দামোদর নদের সংযোগস্থল বেগোর মুখে পিকনিক স্পট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Like Us On Facebook