দামাল হাতিরা দুর্গাপুর ছেড়েছে কিন্তু হাতি হামলার আতঙ্ক গ্রাস করেছে গোপালমাঠের দিনমজুর অধ্যুষিত গোটা হাঁড়িপাড়া। সেদিন হাঁড়িপাড়ার বেশ কয়েকটি কাঁচা বাড়ি ভেঙ্গে হাতি চলে গিয়েছিল দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার জঙ্গলের দিকে। শীতের নিঝুম রাতে সেদিনের হাতি দর্শনের আতঙ্ক এখনও নরেশ হাঁড়ি, সাগর হাঁড়ি ও কল্যানী হাঁড়িদের চোখে মুখে।
সন্ধ্যা নামার আগেই দিনমজুর অধ্যুষিত এই হাঁড়িপাড়ার বাসিন্দারা নিজেদের পকেটের কড়ি খরচ করে হ্যালোজেন বাতি জ্বালিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বাঁচাতে খোলা আকাশের নীচে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। অনেকে ভাঙ্গা বাড়িতে আতঙ্কে ঢুকতেও ভয় পাচ্ছেন। রাতের পর রাত জেগে রুজি-রোজগার মাথায় উঠেছে পাড়ার পুরুষদের।
হাতির হানায় হাঁড়িপাড়ার একমাত্র আহত ব্যাক্তি সুনীল হাজরা এখনও দুর্গাপুর আই কিউ সিটি হাসপাতালে চিকাৎসাধীন। সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে সুনীল বাবুও হতবাক। সেদিন রাতে হাতি যখন একের পর এক বাড়ি, পাঁচিল ভেঙ্গে চলেছে সেই সময় সুনীল বাবু পাঁচিলের নীচে চাপা পড়ে আহত হন। তাঁর উপর দিয়ে হাতি চলে যায়। কাকতালীয় ভাবে রক্তাক্ত হয়েও প্রাণ ফিরে পাওয়ায় সুনীল বাবু মনে করছেন রাখে হরি তো মারে কে? সেদিন সাক্ষাৎ ভগবান দর্শনে সুনীল বাবুর মতো যে কয় জন হাঁড়িপাড়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছেন সেটা হাতিরই দয়া বলে মনে করছেন সকলে।
হাঁড়িপাড়ার আর এক বাসিন্দা অন্ধ কল্যাণী হাঁড়ি। চোখে না দেখতে পেলেও ভোর রাতে ঘরের টালির চাল ভাঙ্গার সময়ে হাতির ডাক এখনও কানে বাজে বলে জানান। বৌমা নাতি নাতনিদের বাঁচাতে অন্ধ কল্যাণীদেবী হাতির কাছে হাতজোড় করে প্রাণ ভিক্ষা চান। সেদিনের কথা বলতে বলতে অঝোরে কেঁদে ফেলেন অন্ধ কল্যাণীদেবী। ক্ষয় ক্ষতি হলেও প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ায় হাতিকে কৃতজ্ঞতা জানায় হাঁড়িপাড়ার বাসিন্দারা।
হাঁড়িপাড়ার বিভিন্ন বাড়ির উঠানে হাতির পায়ের ছাপ এখনও স্পষ্ট। মহিলারা সেই পায়ের ছাপের সামনেই ধূপ-ধুনো দিচ্ছেন হাতি দেবতাকে সন্তুষ্ট রাখতে। যাতে আবার সে ফিরে না আসে।
হাঁড়িপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ হাতির হামলার পর নিয়ম রক্ষায় বনদপ্তর একবার খবর নিয়েছে ক্ষয় ক্ষতির। কিভাবে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে সে বিষয়ে তাঁদের কিছুই জানা নেই।
দুর্গাপুরের মূখ্য বনপাল মিলন কুমার মণ্ডলকে বার বার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক শঙ্খ সাঁতরা কে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে বনদপ্তরের অধীন। বনদপ্তর হাতি হামলায় ক্ষয় ক্ষতির বিস্তারিত রির্পোট দুর্গাপুর মহকুমা কার্য্যালয়ে পাঠালে তবেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে প্রশাসন।”