মধুমেহ রোগে আক্রান্ত চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া হত দরিদ্র রুমকিকে শেষমেষ বৃহস্পতিবার সকালে দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক নিজে গিয়ে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করলেন। খোদ মহকুমাশাসক রুমকিকে ভর্তি করতে যাওযায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে রুমকির দেখভাল শুরু করল মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল রুমকির চিকিৎসা ও সেবা-শুশ্রূষা।
বুধবার রুমকির মা পারুলদেবী ও রুমকির এক শুভাকাঙ্ক্ষী কাকলি গুহ দুর্গাপুর মহকুমা কার্যালয়ে গিয়ে মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরাকে পারিবারিক ও আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়ে রুমকির দুরারোগ্য মধুমেহ রোগের চিকিৎসা করাতে না পারার কথা জানালে মহকুমাশাসক রুমকির চিকিৎসা সহ রুমকির পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য উদ্দোগ নেন। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও রুমকির পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। এর পরই মহকুমাশাসক একটি বেসরকারি সংস্থার অ্যাম্বুলেন্সে করে রুমকিকে চিকিৎসার জন্য মহকুমা হাসপাতালে পাঠান। মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকরা বেড না থাকার অজুহাতে অসুস্থ রুমকিকে ভর্তি না নিয়ে পরের দিন আসতে বলেন বলে অভিযোগ রুমকির মা পারুল দেবী ও রুমকির পড়শী কাকলি গুহর।
এর পর অসুস্থ রুমকিকে নিয়ে বাধ্য হয়ে মিনিবাসে করে স্টিল টাউনশিপ নাগার্জুনে ফিরতে হয় রুমকিদের। এতে রুমকি আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই কথা ফের মহকুমাশাসকের কানে যেতেই বৃহস্পতিবার সকালে রুমকির জন্য দুর্গাপুরের মাল্টিস্পেশালিটি বেসরকারি হাসপাতাল আই কিউ সিটি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন মহকুমাশাসক। রাতারাতি এই খবর চাউর হতেই ভোল পাল্টে যায় মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বৃহস্পতিবার সকালেই ফের রুমকিকে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তির তোড়জোড় শুরু হয়। আই কিউ সিটির বদলে বৃহস্পতিবার সকালে ফের দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা নিজে গিয়ে ভর্তি করান অসুস্থ রুমকিকে। মহকুমাশাসক উদ্যোগী হওয়ার খবরে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি স্কুল রুমকির চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার আর্থিক সাহায্য করে।দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা বলেন, এটা খুব মানবিক ব্যাপার। অসুস্থ রুমকির চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে মহকুমা প্রশাসন থেকে। পরবর্তী সময় চিকিৎসার প্রয়োজন হলে রুমকিকে কলকাতার চাইল্ড হেল্থেও পাঠানো হতে পারে বলে দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার সাত সকালে খোদ মহকুমাশাসক রুমকিকে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে যাওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান রুমকির মা পারুল রাও ও রুমকির পড়শি কাকলি গুহ।
উল্লেখ্য, দুর্গাপুরের স্টিল টাউনশিপের নাগার্জুনের বস্তি এলাকার বাসিন্দা পারুল রাও-এর কন্যা রুমকি সুগারে আক্রান্ত হয়। রুমকির রক্তে সুগারের পরিমাণ কখনো কখনো ৫০০-৬০০ থাকে বলে দাবি পারুল দেবীর। স্বামীও রোজগার হীন, পারুলদেবীর নিজের আয়ার কাজটিও যায় মেয়ের চিকিৎসায় সময় দিতে গিয়ে। বিপিএল কার্ড না থাকায় বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত পরিবারটি। স্বাভাবিক ভাবেই রুমকির ব্যয়বহুল চিকিৎসাও করতে পারছেন না পারুলদেবী। হতদরিদ্র রাও পরিবার তাই বুধবার রুমকির চিকিৎসার জন্য দুর্গাপুর মহকুমাশাসকের দারস্থ হন।