বৃটিশ ও ইতালিয়ান স্থাপত্য বর্ধমানের সোনার কালিবাড়িকে এক অন্যমাত্রা দিয়েছিল কিন্তু বর্তমানে প্রয়োজন সংস্কারের। সেই সময়ের বিখ্যাত স্থপতি ও শিল্পীদের দিয়ে মন্দিরের ইমারতটি তৈরি করিয়েছিলেন তদানিন্তন বর্ধমানের মহারাজা। ফলে, এটি এমন ‘শানদার’ ও সুন্দর কান্তি লাভ করল যা এই জাতীয় ইমারতের মধ্যে অদ্ভুত ও অতুলনীয়। পুরাতন এই সোনার কালিবাড়ি মন্দিরটি বর্ধমানের মহারাজা নির্মাণ করেছিলেন রাজবাটি সংলগ্ন এলাকায় ১৮৯৯ সালে। সোনার মূর্তি বর্তমানে নেই, কিন্তু মন্দিরটি আজও সোনার কালিবাড়ি হিসাবে বিখ্যাত। দেবীর বর্তমান মূর্তিটি অষ্টধাতুর তৈরি এবং বিশাল সিংহাসনে স্থাপিত আছে মন্দিরের বিশেষ কক্ষে।
সেকালের দক্ষ শিল্পীরা দরজা, ঘরের খিলেন, দালান এবং মন্দিরের দেওয়ালের ওপর এমন সব সুন্দর নকশা করেছিলেন, আজকাল তা কদাচিৎ সম্ভব। মন্দিরে প্রবেশ করার আগে দশনার্থীদের প্রথমে অতিক্রম করতে হবে ‘নহবৎ খানা’। এছাড়া রয়েছে রাজার আমলের দুটি কূপ। একটি মন্দিরের ভিতরে অপরটি মন্দিরের বাইরে। আজও কূপে জল রয়েছে, কোনোদিনের জন্য শুকিয়ে য়ায়নি বলে দাবী মন্দিরের পুরোহিত, শিবপ্রসাদ ঘোষালের। আজও মন্দিরের যাবতীয় অনুষ্ঠানে কূপের জল ব্যবহৃত হয়।
সোনার কালিবাড়ির দেবীর বিশেষত্ব হল অন্যান্য কালি মূর্তির মতো দেবীর জিহ্বা বাইরে বের হয়ে থাকে না এবং দেবীর পায়ের নীচে মহাদেব কে পাওয়া যায় না। দেবীর অনুরাগী ও ভক্তরা দেবীকে সোনারকালি বলে ডাকেন।
মন্দিরের পুরোহিত, শিবপ্রসাদ ঘোষাল আরও জানান মন্দিরে আজও নিত্যপুজোর সময় ব্যবহৃত হয় ইতালি থেকে আনা প্রাচীন বিশাল আকারের শাঁখ। পুজার সময় এই শাঁখ বাজান হয়, তদানিন্তন বর্ধমানের মহারাজা বিশাল আকারের শাঁখ ইতালি থেকে নিয়ে এসেছিলেন। আজও শাঁখটি অক্ষত রয়েছে। আজও নিত্যপূজার সময় মন্দিরের পুরোহিতরা বাজান এই শাঁখ।
বর্ধমানের মহারাজা মহাতাব চাঁদের পত্নী নারায়নী কুমারী খুব ধর্ম পরায়ণ মহিলা ছিলেন। নারায়নী তন্ত্র সাধনায় বিশ্বাস করতেন ও পূজা-অর্চনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন সেইজন্য মহারাজা এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন নারায়নী মাতা ভুবেনেশ্বরী মন্দির নামে মিঠাপুকুর এলাকায় ১৮৯৯ সালে। সেই মন্দির পরবর্তী সময়ে সোনার কালিবাড়ি হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। রাজ পুরোহিতরা জানান এক সময় মন্দিরে সোনার মুর্তি ছিল। মূল সোনার মূর্তিটি সত্তরের দশকে চুরি য়ায় মন্দির থেকে। এরপর থেকেই এই মন্দির সোনারকালি বলে বিখ্যাত হয়ে য়ায়।
সেই সময় নহবৎ সর্বাধিক প্রগতিশীল বাদ্য ছিল। আমির খুসরো তাঁর কবিতায় সমকালীন নহবৎ বাজনার যে ছবি এঁকেছেন, তা থেকে ওই সময়ের বাজনার ঢ়ং কী ছিল, অনুমান করা যায়। পুরনো দিনে, বিশেষ করে লখনউ-দরবারে এই নহবৎ সময় জ্ঞাপন করত। এখনও সেই শৈলীই চলিত, খুব বেশি বদলায়নি। ‘তুরহী’ ও ‘করনা’ হিন্দুস্তানের অতি প্রাচীন রাষ্ট্রীয় বাদ্য। নহবৎ ইতিহাস প্রসিদ্ধ বাজনা। এই বাজনা দুটির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারত হিন্দুদের পুরনো বাজনা ‘নরসিংঘা’ (শিঙা)। হিন্দুদের ধর্মীয় সমারোহেই এটি বাজান হত। বর্ধমান মহারাজা ভক্তিমুলক বাজানার ব্যবস্থা করেছিলেন, আর সেই কারণে মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে এই নহবৎ খানা তৈরী করেন। সেই সময় এই নহবৎ খানার আলাদা ঐতিহ্য ছিল।