বশ্যতা স্বীকার না করায় তৃতীয় বর্ষের একদল ছাত্র কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মৌসম কুমারকে লোহার রড দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে ও হাতের আঙ্গুল ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। আহত ছাত্রকে বাঁচাতে গেলে মৌসমের বন্ধু অমিত রঞ্জন ও অমিতের ভাই সুরজ কুমারকেও মারধরের অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরের বেঙ্গল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির তৃতীয় বর্ষের একদল ছাত্রের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে ২ জুন রাতে।
ভাগলপুরের বাসিন্দা মৌসম কুমার দুর্গাপুরের বেঙ্গল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মৌসম কলেজের পাশেই একটি ভাড়া বাড়িতে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করার জন্য ভাড়া নিয়ে থাকে। মৌসমের সঙ্গে একই বাড়ির নীচের তলায় থাকে অমিত রঞ্জন। অমিতের অভিযোগ, বেঙ্গল কলেজ ক্যাম্পাসের জনা চল্লিশ সিনিয়র ছাত্র একটি গ্রুপ তৈরি করে জুনিয়র ছাত্রদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। জুনিয়র ছাত্রদের উপর সিনিয়রদের ওই দলটি বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালায়। যেসব ছাত্র এই সব সিনিয়রদের কথায় সায় না দেয়, তাদের উপর চলে নির্যাতন। অমিতের আরও অভিযোগ, ভাগলপুরের মৌসম কুমারও ওই সিনিয়ার ছাত্রদের গুরুত্ব না দেওয়ায় তাকে বাড়িতে গিয়ে লোহার রড দিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়। মৌসমকে বাঁচাতে গেলে আমাকে ও আমার ভাইকে ব্যাপক মারধর করা হয়। খবর পেয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ছুটে এসে পুলিশের দ্বারস্থ হয়। মৌসমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৌসমের বন্ধু আহত অমিত রঞ্জন ও তার ভাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। তড়িঘড়ি কলেজ কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় জড়িত বারো জন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রকে সাসপেন্ড করে ও স্থানীয় এনটিএস ফাঁড়িতে অভিযোগ জানায়।
মঙ্গলবার এই ঘটনার খবর পেয়ে মৌসম কুমারের বাবা সঞ্জয় সিং ভাগলপুর থেকে ছুটে এসেছেন ছেলেকে ভাগলপুরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য। জানা গেছে, সঞ্জয় সিং খুব শীঘ্রই পশ্চিম বর্ধমান জেলার পুলিশ কমিশনার ও দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরাকে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সকলকে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাবেন। বেঙ্গল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে নির্যাতনের শিকার আরও এক ছাত্র আশুতোষ সিংকেও ওই সিনিয়ররা কথা না শোনার চরম শাস্তি দিতে ব্যাপক মারধর করে বলে অভিযোগ। এই খবর দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তেই দুর্গাপুরের সুশীল সমাজে নিন্দার ঝড় ওঠে। জানা গেছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ বারোজন ছাত্রকে অভিযোগের ভিত্তিতে সাসপেন্ড করে। এবং ওই সব ছাত্রদের অভিভাবকদের কলেজে দেখা করতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তের ছাত্রদের কলেজ হোস্টেল থেকেও সাসপেন্ড করেছে। ছয় ছাত্রকে নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশ গ্রেফতার করলেও মুচলেকা লিখিয়ে পরে তাদের ছেড়ে দেয় বলে জানা গেছে। দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক শঙ্খ সাঁতরা বলেন, এখনও পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।