গত ৩১ ডিসেম্বর গভীর রাতে বর্ধমানের গলসি থানার শিকারপুরে বালি বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি বাড়িতে উল্টে যাওয়ায় মারা গিয়েছিলেন একই পরিবারের ৫ জন। বছরের শুরুতেই সেই মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতি ফিরল বৃহস্পতিবার রাতে বর্ধমানের জামালপুরের মুইদিপুর গ্রামে। এদিন রাতে মুইদিপুর গ্রামে একটি বালি বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফের উল্টে গেল রাস্তার পাশের একটি বাড়িতে। মারা গেলেন মা ও দুই শিশু। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন বাড়ির কর্তা প্রশান্ত বাড়ুই। মৃতদের নাম সন্ধ্যা বাউরী(৩০), রিঙ্কু বাউরী (১৪), রাহুল বাউরী (১২)। রিংকু বাউরী স্থানীয় স্কুলে নবম শ্রেণিতে এবং রাহুল বাউরী সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় পৌনে ৯টা নাগাদ মুইদিপুর বালি ঘাট থেকে একটি ট্রাক অতিরিক্ত বালি বোঝাই করে দ্রুত গতিতে মুইদিপুর গ্রামের পূর্ত দফতরের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে প্রশান্তবাবুর বাড়িতে উল্টে যায়। সেই সময় ঘরের মধ্যেই শিশুপুত্র ও শিশুকন্যাকে নিয়ে ছিলেন সন্ধ্যা দেবী। বালি ভর্তি ট্রাক উল্টে যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুই শিশুর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সন্ধ্যা বাউরীকে উদ্ধার করে জামালপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পরই গোটা এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে পুলিশের রীতিমত সংঘর্ষ বাধে। উত্তেজিত জনতার ছোঁড়া ইটের আঘাতে বেশ কয়েকজন পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার আহত হন। উত্তেজিত জনতা বালিখাদের অস্থায়ী অফিসে আগুন লাগিয়ে দেন। আগুন লাগানো হয় দুটি ট্রাক ও একটি বালির ট্র্যাক্টরেও। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িও। মৃত দুই শিশুর দেহ আটকে রেখে ওই বালিঘাট বন্ধ করে দেওয়া এবং মৃতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানাতে থাকেন জনতা।
এদিকে, জামালপুর থানার পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমসিম খাওয়ায় বর্ধমান থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়। গোটা ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে হয় রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথকে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃতদের ক্ষতিপূরণ এবং দোষীদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়।
অন্যদিকে, এদিন জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, মুইদিপুরের ঘটনায় পুলিশকে আক্রমণের ঘটনা স্বাভাবিক। স্বজন হারানোয় কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু এই ঘটনায় কোন কেস করা হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, ঘাতক ট্রাকের চালক মদ্যপ ছিলেন। এই ঘটনায় পুলিশ ট্রাকের খালাসিকে গ্রেফতার করেছে। ট্রাকের চালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।