দুর্গাপুরের ফরিদপুর গ্রামের প্রাক্তন শিক্ষক তপন মুখার্জি খুনের পুলিশী তদন্ত নুতন মোড় নিল। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ধৃত প্রদীপ চৌহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ কার্যত নিশ্চিত যে উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা ধৃত প্রদীপ চৌহান ও মৃত তপনবাবুর মেয়ে দুর্গাপুর ওমেন্স কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী শিবানীর মধ্যে প্রথমে ফেসবুক থেকে পরিচয় তারপর সেই সম্পর্ক বেডরুম পর্যন্ত পৌঁছায়। শিবানীর মা মৃত তপনবাবুর স্ত্রী সুনন্দাদেবী ইসিএলের হাসপাতালে নার্সের চাকরি করায় প্রায়ই রাতের ডিউটি করেন। আর প্রাক্তন শিক্ষক তপন মুখার্জি নিয়ম মতো রাত আটটায় প্রতিদিন ঘুমিয়ে পড়েন। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শিবানীর ডাকে সাড়া দিয়ে ভিন রাজ্যে থেকে আগত প্রেমিক প্রদীপ চৌহান স্থানীয় হোটেল থেকে চুপিসাড়ে প্রায় রাতেই শিবানীর বাড়িতে এসে রাত্রি যাপন করে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করত। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই তপনবাবু প্রতিবাদ করেন।

অপরদিকে শিবানীর কিছু আপত্তিকর ছবি প্রদীপের মোবাইলে চলে আসায় প্রদীপও ব্ল্যাকমেল করত শিবানীকে। তাই শিবানীও বাধ‍্য হয়ে প্রদীপের দিনকে দিন বিভিন্ন আবদারে সাড়া দিত বলে সূত্র মারফৎ জানা গেছে। শিবানী ও প্রদীপ চৌহানের সম্পর্ক নিয়ে তপন বাবুর প্রতিবাদের মাত্রা বাড়তে থাকায় প্রদীপ চৌহান প্রায়ই শিবানীকে ফোনে তপনবাবু ও শিবানীর মা সুনন্দাকে খুনের হুমকি দিত বলে জানা গেছে। বেশ কয়েকবার এই নিয়ে থানা পুলিশও হয়। প্রদীপকে একবার আটক করেও পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার আগে গত তিন দিন ধরে ভিড়িঙ্গীর কোয়ালিটি হোটেলে আরও দুই বন্ধুকে নিয়ে কোন পরিকল্পনা করেই ছক কষে ডেরা বাঁধে প্রদীপ। পরে দুই বন্ধু বাড়ি চলে গেলে প্রদীপ একাই হোটেলে থেকে যায়। ঘটনার দিন রবিবার রাতে ফের শিবানীর মায়ের অনুপস্থিতিতে প্রদীপ শিবানীর বাড়িতে ঢোকে। শিবানী ও প্রদীপ একই রুমে মিলিত হয়। হঠাৎই তপনবাবু ঘরে ঢুকে দু’জনকে দেখে নেওয়ায় ফের প্রতিবাদে সোচ্চার হন তপনবাবু। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে হাতের কাছে ফল কাটা ছুরি দিয়ে তপনবাবুকে বেশ কয়েকবার কোপায় প্রদীপ চৌহান। তপনবাবু ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। এরপরে প্রদীপ দৌড়ে শিবানীদের বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে পড়ে পালাতে পাশের বাড়ির ছাদে লাফিয়ে উঠে আটকে পড়ে। এদিকে শিবানীর চিৎকারে পড়শীরা জড়ো হয়ে প্রদীপকে ঘিরে ধরে পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ প্রদীপ চৌহানকে গ্রেফতার করে।

এদিকে সোমবার ধৃত প্রদীপ চৌহানকে দুর্গাপুর পুলিশ আদালতে হাজির করলে আদালত ধৃতের সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। পুলিশ ধৃত প্রদীপ চৌহানকে দিয়ে খুনের পুনর্নির্মাণ করবে এবং শিবানী ও প্রদীপকে মুখোমুখি বসিয়ে ম‍্যারাথন জেরা করে খুনের রহস্য উন্মোচন করবে বলে জানা গেছে। মৃত তপনবাবুর এক আত্মীয়া বলেন, ধৃত প্রদীপ চৌহানকে তাঁরা দুর্গাপুর থানায় কেন তপনবাবুকে খুন করেছে জিজ্ঞাসা করলে প্রদীপ চৌহান তাঁদের বলেন, আমি ইচ্ছে করে খুন করিনি। সোমবার মৃত তপন মুখার্জি ময়নাতদন্তের পর তাঁর মরদেহ প্রথমে ভিড়িঙ্গী মহকুমা গ্রন্থাগার ও পরে ভিড়িঙ্গী টিএন ইনস্টিটিউশনে আনা হয়। তারপর তাঁর বাড়ি ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয় পরে শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

তপনবাবুর বাড়ি

Like Us On Facebook