সোমবার রাত থেকে হঠাৎই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দুর্গাপুর কেমিক্যালস টাউনশিপ। প্রায় সাড়ে তিনশ বাসিন্দা চরম দুর্ভোগে পড়েন। বাড়িতে নেই আলো নেই পানীয় জল। শৌচাগারেও নেই এক ফোঁটা জল। টাউনশিপ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, পানীয় জলের অভাব, বাধ্য হয়ে এলাকা ছাড়ছেন দুর্গাপুর নগর নিগমের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত দুর্গাপুর কেমিক্যালস লিমিটেড কারখানার কোয়ার্টারের অনেক বাসিন্দা। মঙ্গলবার সকালে এই দৃশ্য দেখা গেল দুর্গাপুর কেমিক্যাল টাউনশিপে।
কেমিক্যালস টাউনশিপের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সময় মতো আমরা দুর্গাপুর কেমিক্যালস কারখানা কর্তৃপক্ষকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করি। তা সত্ত্বেও কেন এইভাবে বিনা নোটিশে টাউনশিপের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হল কর্তৃপক্ষকে তার জবাব দিতে হবে। কেমিক্যালস টাউনশিপের বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, সোমবার রাত থেকে আমাদের টাউনশিপ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অথচ স্থানীয় মহকুমা প্রশাসন, দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র, এমনকি স্থানীয় কাউন্সিলর বা শাসকদলের কেউ কোন খোঁজ খবর নেয়নি। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে দুর্গাপুর কেমিক্যালস কারখানার সামনে মঙ্গলবার সকালে বাম-কংগ্রেস জোট বিক্ষোভ দেখায় এবং অবিলম্বে কেমিক্যালস টাউনশিপে বাসিন্দাদের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, রাজ্য শিল্প দফতরের নোটিশে পরিবেশ দূষণের কারণে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ থেকে দুর্গাপুর কেমিক্যালস লিমিটেড কারখানার উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধের মাত্র তিন সপ্তাহের মাথায় কারখানার প্রায় ৩৫০টি কোয়ার্টারে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দিল বিদ্যুৎ দফতর। স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ দেবনাথ জানান, প্রতি মাসেই নিয়মিতভাবে বিদ্যুতের বিল জমা দেওয়া হয়। তার পরেও কেন বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা হল তা কর্তৃপক্ষই জানে। বিষয়টি নিয়ে মহকুমাশাসক এবং মন্ত্রী মলয় ঘটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তার পরেও কোন সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সোমবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই টাউনশিপের বাসিন্দাদের মধ্যে পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দেয়। পাশাপাশি এলাকায় বসবাসকারী মুমূর্ষ রোগীরা সমস্যায় পড়েন।
এলাকার বাসিন্দা মহুয়া সিনহা জানান, বাড়িতে বয়স্ক মা দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভুগছেন। এমন অবস্থায় সোমবার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। খুব অসহায় ভাবে রয়েছি মাকে নিয়ে। অপরদিকে জলের অভাবে মাকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান টাউনশিপের বাসিন্দা সুদীপ্ত মণ্ডল।
দুর্গাপুর নগর নিগমের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের পৌরমাতা আলো সাঁতরা জানান, দুর্গাপুর কেমিক্যালস লিমিটেড এবং রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। পানীয় জলের জন্য নগর নিগমের তরফ থেকে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য দলীয় স্তরেও কথাবার্তা বলা হচ্ছে। জানা গেছে, কেমিক্যালস টাউনশিপে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু না হলেও পুরসভার পক্ষ থেকে টাউনশিপে জলের ট্যাঙ্ক দেওয়া হয়।