একটা সময় নেপালের হিংয়ের শিল্পাঞ্চল জুড়ে প্রবল চাহিদা ছিল‌। পিঠে ঝোলানো ব্যাগ মাথায় টুপি পরা বাহাদুররা ফেরি করে সেই হিং বিক্রি করতেন বাড়ি বাড়ি। কিন্তু এখন হিং বিক্রি সেই ভাবে না হওয়ায় নেপাল থেকে আগত বাহাদুরদের রুজিরুটি জোগাচ্ছে বলবর্ধক ‘পাহাড়ের ঘাম’। শিল্পাঞ্চল জুড়ে আকাশছোঁয়া চাহিদা থাকায় পাহাড়ের ঘাম বিক্রি করেই এখন বাহাদুররা মুনাফা অর্জন করছেন।

কিন্তু কি এই পাহাড়ের ঘাম? এই পদার্থ বিক্রি করা নেপালি বাহাদুরদের দাবি, পাহাড়ের ঘাম হল বলবর্ধক এক ধরণের কালচে-ধূসর চটচটে পদার্থ। যা পাহাড়ের গা থেকে নিঃসৃত হয়। গ্রীষ্মকালে নেপালের পাহাড়ি এলাকার মানুষ তা সংগ্রহ করে রাখেন। এই পাহাড়ের ঘাম প্রতি দিন গরম দুধ বা জলে এক চামচ মিশিয়ে খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায় বলে দাবি। বলবর্ধক এই পাহাড়ের ঘাম কেবলমাত্র যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাওয়াই নয় বাতের ব্যথা, হাঁপানিও নাকি সেরে যায় কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই। সেই রকমই দাবি নেপাল থেকে আগত পাহাড়ের ঘাম বিক্রেতা ভীম বাহাদুর, মান বাহাদুর, নর বাহাদুরদের।

প্রায় দশ-পনেরো জনের একটি দল নেপাল থেকে এসে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার, বেনাচিতি, স্টিল টাউনশিপ, গোপালমাঠ, বিধাননগর সহ পানাগড় এলাকায় ঘুরে ঘুরে হিংয়ের সঙ্গে এই পাহাড়ের ঘাম বিক্রি করছেন। পাহাড়ের ঘাম বিক্রেতা ভীম বাহাদুর বলেন, ‘শীত মরসুমেই এই পদার্থের বেশি চাহিদা থাকে। তাছাড়া অন্য মরসুমেও চাহিদা রয়েছে এই পাহাড়ের ঘামের। কিন্তু যেহেতু নেপালে শীতের সময় আমাদের চাষ হয় না। তাই আমরা অনায়াসে অন্যান্য জায়গার মতো দুর্গাপুরেও এসে এই পাহাড়ের ঘাম চাহিদা অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করি।’ ভীম বাহাদুর আরও বলেন, ‘১ গ্রাম পাহাড়ের ঘামের দাম ৮০ টাকা কিন্তু উৎকৃষ্ট মানের বলবর্ধক পাহাড়ের ঘাম নিতে হলে ক্রেতাকে ১ গ্রামের জন্য ১০০ টাকা দিতে হবে।’ ভীম বাহাদুরের দাবি, অন্যান্য জায়গায় চাহিদা থাকলেও সেই রকম দাম পাওয়া যায় না। কিন্তু শিল্পাঞ্চলের ক্রেতাদের চাহিদা থাকায় এবং তাঁরা এই পদার্থের সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় সাধারণত কেউ আর দরদাম করেন না। চুপিসারে বলবর্ধক পাহাড়ের ঘাম আমাদের থেকে সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে যান। ভীম বাহাদুরের আরও দাবি, যেহেতু এই পদার্থের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বা বাড়িতে মজুদ পাহাড়ের ঘাম নষ্ট হয় না তাই বাড়িতে সংগ্রহ করে রাখেন অনেকেই। শীতের সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে পাহাড়ের ঘাম কিনতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, ‘পাহাড়ের ঘাম পৌরাণিক সময় থেকে আজ পর্যন্ত চিরযৌবন ধরে রাখতে বলবর্ধক ঔষধি হিসেবে অব্যর্থ। আমি নিয়মিত এই ওষুধ ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছি। তাই পাহাড়ের ঘাম আমার কাছে মহৌষধি’।


Like Us On Facebook