রবিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান, মেমারি, কালনা, দাঁইহাট, কাটোয়া ও গুসকরা পুরসভা নির্বাচনে দাপিয়ে ভোট করালো রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। গুসকরায় বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা এবং কালনার একটি বুথে দরজা বন্ধ করে লাগাতার ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে তুলকালাম শুরু হয়। কালনায় সিপিএম এই ঘটনায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখায়। বিরোধীদের অভিযোগ, রবিবার সকাল থেকেই প্রায় প্রতিটি পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডের বুথেই পুলিশের সামনেই প্রিসাইডিং অফিসারদের ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে তৃণমূলের নেতারা ছাপ্পা ভোট দিয়েছেন। বর্ধমানের ১৪নং ওয়ার্ডের বিজেপি এজেণ্ট উজ্জ্বল চ্যাটার্জী এদিন বুথে আসতেই তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়। ১৪নং ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী শ্যামল রায় জানিয়েছেন, প্রায় ৬ ঘণ্টা পর উজ্জ্বলবাবুকে দক্ষিণ দামোদরের রায়না থানার হিজলনা থেকে উদ্ধার করা হয়। তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে মারধর করা হয়। গোটা বিষয়টি পুলিশকে জানালেও পুলিশ উজ্জ্বল চ্যাটার্জীকে উদ্ধার করতে পারেনি বলে অভিযোগ।
এদিকে, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলে এদিন বিকেলে বিজেপির বর্ধমান পুরসভার ৩৩জন প্রার্থীই বর্ধমান সদর মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাসের চেম্বারের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা ভোট বয়কটের পাশাপাশি ২ তারিখ ভোট গণনার দিন গণনা বয়কট করার কথা ঘোষণা করেন। বিজেপি প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদেরই ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর সময় পুলিশের সঙ্গে বচসাও বাধে বিজেপি প্রার্থীদের। একজন বিজেপি প্রার্থীকে পুলিশ জোর করে অবস্থান বিক্ষোভ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় উত্তেজনা ছড়ায়। যদিও বিশাল পুলিশ বাহিনী উপস্থিত থাকায় পরিস্থিতি সামাল দেন তাঁরা। গোটা জেলা জুড়ে ছাপ্পাভোট, বিরোধী দলের এজেণ্ট ও প্রার্থীদের মারধর করার অভিযোগ তুলে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সিপিএমও। এদিন বিকালে বর্ধমান শহরের কার্জন গেটের সামনে তাঁরা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার অভিযোগ তুলে ধর্ণায় বসেন।
যদিও বিরোধীদের তোলা এইসব অভিযোগের বিপক্ষে শাসকদলের কোনো বক্তব্য মেলেনি। শুধু এটাই নয়, এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের বহু নেতাই রীতিমত অভিযোগ করেছেন, তাঁদেরই কর্মীদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। বস্তুত, রবিবার পুরভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের একদিকে যেমন বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে, তেমনই নিজের দলের লোকদের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, ভোট মেটার কয়েকঘণ্টা আগেই রীতিমত উত্তপ্ত হয়ে উঠল বর্ধমান শহরের ৩নং ওয়ার্ডের রসিকপুর এলাকা। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতা আব্দুর রবের অনুগামীদের বিরদ্ধে। বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, শনিবারই আব্দুর রবের লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু এদিন তাঁদের কথামত কাজ না হওয়ার জন্যই বাড়ি বাড়ি ভাঙচুর চালানো হয়েছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আব্দুর রব। তিনি জানিয়েছেন, দুই বন্ধুর মধ্যে বচসা হয়। সেজন্য কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। যদিও বিষয়টি জানতে পেরেই তিনি তা থামিয়ে দিয়েছেন। যদিও এদিন এই ঘটনার জেরে বর্ধমান থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী রসিকপুরে যায়। অপরদিকে, জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এদিন বর্ধমান পুর এলাকায় অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগে ৪২জনকে আটক করা হয়েছে।