দুর্গাপুরের ফরিদপুর থানার কালীগঞ্জ অঞ্চলের দুঃস্থ সাহায়-সম্বলহীন দিনমজুর আদিবাসী দম্পতি বাসুদেব মান্ডি ও মাংলি মান্ডির একমাত্র সন্তান হেমন্ত মান্ডি। ছোট থেকেই বইয়ের প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ। বড় হয়ে শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা হেমন্তর। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে সে শৈশব থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন। চোখে আলো না থাকলেও অদম্য জেদ ও মেধা তাকে শিক্ষার আলো থেকে দুরে সরে থাকতে দেয় নি।

প্রাথমিক স্কুলের পাঠ নিতে হেমন্ত ভর্তি হয় শিবতলা এমএসকে বিদ্যালয়ে। সেখানে পড়াশুনার প্রতি হেমন্তর আগ্রহ দেখে জনৈক সমীরবাবু দৃষ্টিহীনদের জন্য ভালো স্কুলের খোঁজ শুরু করেন। সমীরবাবুর সহায়তায় হেমন্ত ভর্তি হয় দৃষ্টিহীনদের জন্য হুগলি জেলার লুই ব্রেইল মেমোরিয়াল স্কুল ফর দ্য সাইটলেস বিদ্যালয়ে। নরেন্দ্রপুর থেকে তাকে ব্রেইল মেশিন প্রদান করা হয়। ওই স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ পাল ও শিক্ষক তাপনবাবুর তত্ত্বাবধানে মাধ্যমিকে ৫৫ শতাংশ নম্বর পায় হেমন্ত। উচ্চ মাধ্যমিকে কালীগঞ্জ এলাকার জনৈকা মিনিদি হেমন্তকে ‘শব্দ রেকর্ডিং পঠন পদ্ধতির’ মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করেন। হেমন্ত সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক ৫১ শতাংশ নম্বর পায় দুর্গাপুর বিধাননগর বয়েজ হাইস্কুল থেকে।

হেমন্ত জানায়, সে কোন সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে ইংরেজি, বাংলা বা ইতিহাস নিয়ে পড়তে চায়। ভবিষ্যতে শিক্ষক হয়ে সকল দৃষ্টিহীন ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে হেমন্ত।

দৃষ্টিহীন ও দুঃস্থ হেমন্তর ব্যাপারে দুর্গাপুরের দুই সমাজসেবী কল্যাণ আশীষ ঘোষ ও অলীক রায় ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের আপ্ত সাহায়ক সোমনাথ পালকে জানান। সোমনাথবাবু ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হয়ে এই ব্যাপারটি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে জানান। অরূপবাবু তৎক্ষণাৎ হেমন্ত মান্ডির উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে সর্বপ্রকার সাহায্যের আশ্বাস প্রদান করেন এবং কল্যাণ আশীষবাবু ও অলীকবাবুর মাধ্যমে হেমন্তের উদ্দেশ্যে উপহার স্বরূপ মিষ্টান্ন, বই ও পুষ্পস্তবক পাঠান।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি হলে হেমন্তর জন্য একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় মানুষজনের সামনে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পাঠানো উপহার ও পুষ্পস্তবক হেমন্তের হাতে তুলে দেন স্থানীয় বিশিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী বিজন ব্যানার্জী।

Like Us On Facebook