বাড়ি থেকে পালিয়ে ভিন্ন সম্প্রদায়ের ছেলেকে বিয়ে করায় বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে রাজস্থান পুলিশ দুর্গাপুর থেকে আটক করে নিয়ে গেল ২৪ বছরের যুবতীকে। ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম ম্যারেজ অ্যাক্টে রেজিস্ট্রি করার পরও পুলিশ নব দম্পতিকে কি ভাবে হেনস্থা করতে পারে সেই অভিযোগ করলেন ছেলের বাড়ির লোকজন। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দুর্গাপুরের মুচিপাড়ার আমবাগানে। মেয়ের বাবার নিখোঁজ অভিযোগের ভিত্তিতে রাজস্থান পুলিশ দুর্গাপুরের বিধাননগর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুক্রবার দুর্গাপুর আদালত থেকে ট্রানজিট রিমান্ডে রাজস্থান নিয়ে গেল যুবতীকে। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দশ-বারো বছর আগে কর্মসূত্রে দুর্গাপুরের বছর তেত্রিশের জামাল হোসেন রাজস্থান পাড়ি দেন। কর্মস্থলে থাকাকালীন রাজস্থানের পালি জেলার সাদরি থানা এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী রাজেন্দ্র কুমার জৈন-এর পরিবারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরিবারে যাতায়াতের সুযোগে রাজেন্দ্র কুমারের মেয়ে বছর চব্বিশের মনিষা জৈনের সঙ্গে জামাল হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইতিমধ্যে জামাল কর্মসূত্রে অন্যত্র পাড়ি দিলেও ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দু’জনে যোগাযোগ রাখতেন। জামালের পরিবারের দাবি, সম্প্রতি মনীষা জামালকে ফোন করে জানায় সে জামালকে বিয়ে করতে চায়। মনীষার পরিবার এই বিয়ে মেনে নেবে না বলে জামাল জানালেও মনীষা বাড়ি থেকে পালিয়ে জামালকে বিয়ে করতে চায় বলে জানায়। এরপর মনীষা জামালের সঙ্গে দুর্গাপুরে চলে আসে। দুর্গাপুরে এসে মনীষা আদালতে হলফনামার মাধ্যমে নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে এবং ১৬ জুলাই মুসলিম মতে তাঁদের বিয়ে হয়।
অন্যদিকে, মনীষার পরিবার সাদরি থানায় মনীষার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করে। রাজস্থান পুলিশ মোবাইলের সূত্র ধরে দুর্গাপুরের মুচিপাড়ায় জামাল হোসেন ও মনীষার খোঁজ পায়। এরপরেই রাজস্থান পুলিশ দুর্গাপুরের বিধান নগর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিধান নগর পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে জামাল হোসেন ও মনীষাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। রাজস্থান পুলিশ শুক্রবার জামালকে ছেড়ে দিয়ে মনীষাকে আদালতে পেশ করে ট্রানজিট রিমান্ডে রাজস্থান নিয়ে যায়।
রাজস্থান পুলিশের সঙ্গে যাওয়ার সময় মনীষা সাংবাদিকদের জানান, তিনি জামাল হোসেনের সঙ্গেই থাকতে চান। রাজস্থানে ফিরে যেতে চান না। স্বাভাবিকভাবেই জামালের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠছে যে আইন মোতাবেক বিবাহের পর আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুলিশ কি এই ভাবে সাবালিকাকে নিয়ে যেতে পারে? জামাল হোসেন ও মনীষা জৈন-এর প্রেমে জাতপাত ও বৈভব বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় যেন ফের একবার রিজওয়ানুর রহমান-প্রিয়াঙ্কা টোডির প্রেম কাহিনী সকলকে মনে করিয়ে দিল।