জলস্তর না কমায় সোমবার সকাল পর্যন্ত দুর্গাপুরের দামোদরের ৩১ নং লকগেটটির মেরামতির কাজ শুরু করা গেল না। রবিবার রাতভর তিনটি পোকল্যান দিয়ে মাটি তুলে জলের গতিপথ পরিবর্তন করার চেষ্টা এব বালির বস্তা ফেলে জল আটকানোর চেষ্টা হলেও ৩১ নং লকগেটটিতে এখনও জলস্তর একই রয়েছে। তাই সোমবার দিনভর ফের দামোদর ব্যারেজের ৩১ নং লকগেট মেরামতির জন্য প্রথমে জলস্তর কমানোর কাজে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিকল্প কিছু পরিকল্পনার কথাও ভাবছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়াররা। লকগেটে মেরামতির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মীরা জানান, লকগেট মেরামতির কাজ শুরু করতে এখনও বেশ কয়েকঘন্টা সময় লাগবে।
এদিকে সোমবার সকাল থেকে দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে বিভিন্ন এলাকা সূত্রে জানা গেছে। সোমবার সকাল থেকে দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকায় দুর্গাপুর পুরসভার পানীয় জলের ট্যাঙ্কার পৌঁছালেও স্থানীয় মানুষের জল সংগ্রহ করতে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। বিশেষ করে দুর্গাপুরের স্টেশন সংলগ্ন গ্যামন ব্রিজ, লেবার হাট এলাকায় সোমবার সকাল থেকে পানীয় জল সংগ্রহের জন্য লম্বা লাইন পড়ে। দুর্গাপুরেও স্টিল টাউনশিপেও প্রয়োজনের তুলনায় কম পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে বলে টাউনশিপের অনেক বাসিন্দাই অভিযোগ করেন। ভিরিঙ্গী, বেনাচিতি সহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতেও গত দু’দিনের তুলনায় সোমবার সকাল থেকে পানীয় জলের সরবরাহ কম হচ্ছে বলে স্থানীয় মানুষ জানান।
দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ অগস্থি দুর্গাপুরে বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে – একথা মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘দামোদর ব্যারেজের বিপর্যয় মোকাবিলা দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের জন্য প্রয়োজনীয় পানীয় জল সরবরাহ করছে দুর্গাপুর পুরসভা। হয়তো সরবরাহ কম, কিন্তু পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেয় নি। দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের পানীয় জলের প্রয়োজন মেটাতে দুর্গাপুর পুরসভা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রচুর জলের ট্যাঙ্কার আসছে, পানীয় জলের কোন অসুবিধা হবে না। এবং বিশেষ করে বস্তি এলাকায় পানীয় জলের পাউচ সরবরাহ করা হবে। সেই পানীয় জলের পাউচ তৈরির তিনটি গাড়ি দুর্গাপুরে এসে গেছে। এবং ৭০ হাজার পাউচ ইতিমধ্যে বিলি করা শুরু হয়েছে বিভিন্ন বস্তি এলাকায়। কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমকে অনুরোধ করে আমি কলকাতা থেকে বড় পানীয় জলের ট্যাঙ্কার আনাচ্ছি দুর্গাপুরে। আমি সব রকম চেষ্টা করছি যাতে লকগেট মেরামতির সময় দুর্গাপুরে পানীয় জলের সঙ্কট না দেখা দেয়।
এদিকে, দামোদর ব্যারেজে লকগেট বিপর্যয়ের জেরে জল সরবরাহ বন্ধ থাকায় দুর্গাপুরের বিভিন্ন কলকারখানায় উৎপাদনে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সোমবার সকালে দুর্গাপুরের শ্যাম স্টিল কারখানায় জলের অভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি। শ্যাম স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজের আধিকারিক কাজল দাস বলেন, ‘লকগেট বিপর্যয়ে জল সরবরাহ বন্ধ আমাদের কারখানায়। তাই কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরাও পানীয় জলের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তাই আমাদের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ দফতরে কারখানার উৎপাদন বন্ধের কথা জানিয়ে দিয়েছি আমরা।’