প্রতি বছরের মতো এবারও কালীপুজোর আগের রাতে অর্থাৎ ভূত চতুর্দশীতে দুর্গাপুরের অম্বুজা নগরী সংলগ্ন ভবানী মায়ের মন্দিরে মহা সমারোহে অনুষ্ঠিত হল বাৎসরিক পুজো। বাৎসরিক পুজো উপলক্ষে মন্দিরে বিশাল ভক্ত সমাগম হয়। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা মায়ের মন্দিরে এদিন পুজো দিতে আসেন।
জানা গেছে, একসময় বিপ্লবীদের আস্তানা ছিল এই ভবানী পাঠকের মন্দির। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা মা কালীর আশীর্বাদ নিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধে যেতেন। তাই প্রচলিত মন্ত্রে নয় ভবানী পাঠকের মা কালী আজও বন্দে মাতরম্ মন্ত্রে পূজিত হন। ভবানী পাঠক প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরে ডাকাতরানি দেবী চৌধুরানীও থাকতেন। ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী মিলে ডাকাতি করে বিপ্লবীদের দেশ সেবায় সাহায্য করতেন বলে শোনা যায়। সেই সময়কার অনেক নিদর্শন আজও বর্তমান।
দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারের অম্বুজা আবাসন এলাকায় এখনও গা-ছমছম জঙ্গল পরিবেশের এই মন্দরে নিয়মিত ভক্তরা আসেন ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানীর মন্দির দর্শন করতে। তারাপীঠের মায়ের রীতি মেনে শ্যামাকালী পুজোর আগের নিশিরাতে আর্থাৎ ভূত চতুর্দশীতে ভবানী মায়ের বাৎসরিক পুজো অনুষ্ঠিত হয়। অম্বুজা আবাসন এলাকার কংক্রিটে মোড়া অভিজাত এলাকায় অবস্থিত হলেও মন্দিরের আশেপাশে সেই সময়কার গা-ছমছমে পরিবেশ আজও বিদ্যমান। দুর্গাপুরের মানুষ আজও এই মন্দিরটিকে ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানীর মন্দির নামেই চেনেন।
মন্দিরের পুরোহিত সূত্রে জানা যায়, মন্দিরের প্রবেশ পথে ও মন্দিরের ভিতরে মায়ের বেদিতে খোদাই করা রয়েছে দেশাত্মবোধক মন্ত্র, ওঁ বন্দে মাতরম্ জয় জয় ভারতবর্ষম। এছাড়াও এই মন্ত্রের সঙ্গে আরও উচ্চারিত হয় ঐক্যম শরণম্ গচ্ছামি, সত্যম শরণম্ গচ্ছামি, স্বরাজ শরণম্ গচ্ছামি।
মন্দিরের বর্তমান সেবাইত মিলন চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ডট কমকে বলেন, ‘এই মন্দিরে প্রতিবছর মায়ের বাৎসরিক পুজো হয় কৃষ্ণপক্ষে ভূত চতুর্দশীতে অর্থাৎ শ্যামাপুজোর আগের দিন। পুজোয় প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। আগে মন্দিরের পাশের ইছাই সরোবরের মাছ দিয়ে মায়ের ভোগ রান্না হত, কিন্তু সরোবরে যেহেতু মাছ আর পাওয়া যায় না সেহেতু বর্তমানে মায়ের ভোগ হয় সম্পূর্ণ নিরামিষ। এটি একটি ঐতিহাসিক মন্দির। আমরা এই মন্দিরের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি।’