ফাইল চিত্র

দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারের অম্বুজা নগরীর ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি দুর্গাপুর নগর নিগমের উদাসীনতায় নষ্ট হতে বসেছে। ২০০৭ সালে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের কাছ থেকে লটারির মাধ্যমে এক ব্যক্তি জমি পেয়ে বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির সন্ধান পান। এরপরই ওই ব্যক্তির কাছ থেকে দুর্গাপুরের বাম পরিচালিত তৎকালীন পুরবোর্ড জমিতে থাকা পুরাকীর্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অধিগ্রহণ করে নেয়। রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ জানায়, সুড়ঙ্গটি মধ্যযুগের। রোমান শৈলীর ছোঁয়া থাকা এমন স্থাপত্য রাজ্যে বিরল।

পশ্চিমবঙ্গ ঐতিহাসিক পুরাবস্তু ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ও প্রত্নক্ষেত্র খনন আইন ১৯৫৭’-র ৩ ধারা ১ উপধারা অনুসারে সুড়ঙ্গটি ‘সংরক্ষিত’ হিসেবে ঘোষিত হয়। তৎকালীন বাম বোর্ড দুর্গাপুর নগর নিগমের হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটিকে এই প্রত্ননিদর্শন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্ব দেয়। এরপর ওই কমিটির তত্বাবধানে দুর্গাপুর নগর নিগম অম্বুজা নগরীর ওই ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিটিকে সংস্কার করে জনসাধারণকে দেখার সুযোগ করে দিতে খুলে দেয় ২০০৯ সালের ১৫ আগষ্ট।

এই পুরাকীর্তিটিকে নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক কথা শোনা যায়। যেহেতু সুড়ঙ্গটির এক দিক জলাশয়ে শেষ হয়েছে, কেউ কেউ বলেন এটা নিছকই জলাশয়ের জল সরবরাহ বা অতিরিক্ত জল নির্গমনের একটি নালা মাত্র। আবার অনেকে বলেন, এই সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে দেবী চৌধুরানি যেমন পাশের ঝিলে স্নান করতে যেতেন সকলের অন্তরালে তেমনই এই সুড়ঙ্গ পথের কিছুটা দূরে বড় একটি গুহাও রয়েছে। আপদকালীন পরিস্থিতিতে ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানি ও আন্যান্য বিপ্লবীরা সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে গুহার মধ্যে পৌঁছে যেতেন এবং গুহার উপর উঠে শত্রুপক্ষের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতেন। বর্তমানে সুড়ঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে সেই ঝিলও অবহেলিত। পাশাপাশি একদা ভবানী পাঠকের নামাঙ্কিত শত্রু পর্যবেক্ষণ টিলাটিও সংরক্ষিত না করে টিলাটিকে কেন্দ্র করে এনার্জি পার্ক গড়ে ওঠায় টিলাটির প্রকৃত রূপ নষ্ট হতে বসেছে।

দুর্গাপুর শিল্পনগরীর বিস্মৃত সময়কালের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননিদর্শন আজ অবহেলিত। অম্বুজা নগরীর এই পুরাকীর্তির জন্য দুর্গাপুর নগর নিগম গত সাত বছরে কোন উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। সিটি সেন্টারের ২২ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত এই স্থানটি ঐতিহাসিক মর্যাদা পেলেও দুর্গাপুরের তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড এই পুরাকীর্তির রক্ষণাবেক্ষণ বা সৌন্দর্যায়নে কোন উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের জাতীয় সম্পদ এই পুরাকীর্তি আজ দুর্গাপুর নগর নিগমের উদাসীনতায় ধ্বংস হতে বসেছে। সুড়ঙ্গ পথ জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। ফলে একদিকে অসামাজিক কাজকর্ম অন্যদিকে সুড়ঙ্গ পথে সাপের আড্ডায় অতিষ্ঠ অম্বুজা নগরীর বাসিন্দারা বলে অভিযোগ। সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে দুর্গাপুর নগর নিগমের মেয়র দিলীপ অগস্তিকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে মেয়র এই বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করেন। দুর্গাপুরের সৌন্দর্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে অম্বুজা নগরীর এই পুরাকীর্তির সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন হলে দুর্গাপুরের মান বাড়বে বলেই মনে করছেন দুর্গাপুরবাসী।


Like Us On Facebook