দামোদর থেকে অবৈধভাবে বালি তোলার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দামোদরের গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা দোফসলি ও তিন ফসলি জমি। এমনই অভিযোগ চাষীদের। ফি বছর দামোদর গিলছে বিঘের পর বিঘে দো ফসলি, তিন ফসলি জমি। আর দামোদরের এই কাজে দোসর হয়ে উঠেছে বালি চোরেরা। ফলে প্রতি বছর পূর্ব বর্ধমান জেলার বিশেষ করে চরমানা, বহরপুর, গৈতানপুর, বেলকাশ অঞ্চলের চাষীরা হারাচ্ছেন তাঁদের রুজি-রুটি। এখনও কোন হেলদোল নেই প্রশাসনের। অসহায় চাষীদের ক্ষোভ বাড়ছে দিনে দিনে।
সাম্প্রতিককালে পূর্ব বর্ধমান জেলার একদিকে যেমন ভাগীরথীর ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে পূর্বস্থলী অঞ্চলের একের পর এক গ্রাম, তেমনই অজয়ের ভাঙনের কবলেও পড়ছে একাধিক গ্রাম। পাশাপাশি দামোদরের তীরবর্তী চরমানা, বহরপুর, গৈতানপুরের বাসিন্দারাও ভাঙনের কবলে পড়ে দিশাহারা। ওইসব এলাকার গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই দু-দশ বিঘে জমি তলিয়ে যাচ্ছে দামোদরের ভাঙনে। নয় নয় করেও গত কয়েকবছরে প্রায় ১০০ বিঘের কাছাকাছি জমি তলিয়ে গেছে দামোদরের গহ্বরে।
চাষীরা জানিয়েছেন, দিন যত এগোচ্ছে ততই বাড়ছে ভাঙনের প্রকোপ। যার অন্যতম কারণ অবৈধভাবে বালি উত্তোলন। তাঁরা জানিয়েছেন, চরমানার অপর পাড় খন্ডঘোষ ব্লকের মধ্যে পড়ে। বালিখাদের ডাক রয়েছে সেখানেই। কিন্তু বালি চোরেরা এপাড়ের কাছাকাছি এসে ছাকনি দিয়ে নদীর তলা দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে পাড়ের দিকের মাটির নীচে থেকে বালি টেনে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে মাটির ভেতর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। আর বর্ষার সময় তা দিয়েই হু হু করে ঢুকছে জল। ধ্বসিয়ে দিচ্ছে বিঘের পর বিঘে জমি। কিন্তু বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে বলার কেউ নেই। গ্রামবাসীরা ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। চোখের সামনে দামোদরের বুকে হারিয়ে যেতে দেখছেন নিজের শেষ সম্বল জমিটুকুকে।
এই চরমানার ভাঙন যে ভয়াবহ তা জেনে সেচ দফতরের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছিল পাড় বাঁধাইয়ের কাজ। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে তা আর শেষ হয়নি। যেটুকু কাজ হয়েছিল জলের তোড়ে তাও ভাঙছে ক্রমাগতই। যদিও এ ব্যাপারে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, জেলার সামগ্রিক এই নদী ভাঙন নিয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে তাঁরা আলোচনায় বসতে চলেছেন। কিভাবে এই ভাঙন রোধ করা যায়, কেন পাড় বাঁধাইয়ের কাজ থমকে গেছে এবং অবৈধ বালি তোলার জন্য যদি ক্ষতি হয় তাহলে তাও রোখা হবে প্রশাসনিকভাবে।