বর্ধমানের সদরঘাটে কৃষক সেতুর পাশে নতুন সেতু গড়ে তুলতে আরও এক ধাপ এগোল পূর্ত দফতর। গত জুলাই মাসে বিস্তারিত রিপোর্ট (ডিপিআর) রাজ্যের পূর্ত দফতরে জমা পড়েছে। সেখান থেকে প্রকল্পের অনুমতি দিয়ে অর্থ দফতরে পাঠানো হয়েছে। পূর্ত দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, অর্থ দফতর ওই প্রকল্প সম্পর্কে কিছু ব্যাখা চেয়েছিল। সেই ব্যাখা-সহ চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের আশা, চলতি বছরের মধ্যেই ৪১০কোটি টাকার প্রকল্পটির অনুমোদন পাওয়া যাবে।
কৃষক সেতু’র বয়সের কথা ভেবে প্রায় দু’বছর আগে কৃষক সেতুর পূর্ব দিকে নিজেদের জমিতেই বর্ধমান-আরামবাগ রোডের উপর নতুন সেতু তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পূর্ত দফতর। ওই সেতুর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রীসভাতে ব্যাখা দিয়েছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী তথা রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। মূলত তাঁরই উদ্যোগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন সেতু কোথায় হবে, তা সরেজমিন দেখে যান পূর্ত দফতরের সচিব অন্তরা আচার্য-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। সেই বৈঠকেই দ্রুত ডিপিআর জমা করার জন্য জেলার পূর্ত আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরেই দ্রুত ডিপিআর করে ৩১ জুলাই তা জমা করা হয়। এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (বর্ধমান ২) সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘পূর্ত দফতরের অনুমতি আগেই মিলেছিল। ডিপিআর করে জমা দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই অনুমোদন মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমানের তেলিপুকুর থেকে বাঁকুড়া মোড় পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তা চার লেনের করা হবে। সেই মতো দু’লেনের কৃষক সেতুর পূর্ব দিকে আরও একটি দু’লেনের সেতু গড়া হবে। নতুন সেতুটি সংযোগকারী রাস্তা ধরে ১২০০ মিটার লম্বা হবে। কৃষক সেতুর আগে ইডেন ক্যানেলের পাশে প্রথমে ৮০ মিটার লম্বা দু’লেনের সেতু তৈরি হবে। পরে পুরানো সেতুটি ভেঙে নতুন করে সেতু তৈরির প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সেতু-সহ রাস্তা জুড়ে আলোর ব্যবস্থা থাকবে। এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (বর্ধমান ২) জানান, কৃষক সেতু থেকে খণ্ডঘোষের পলেমপুর পর্যন্ত জমি নির্ধারণের কাজ চলছে।
নতুন সেতুর প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা হল বর্ধমান-আরামবাগ রাজ্য সড়ক।এই রাস্তা দিয়েই বর্ধমানের সঙ্গে বাঁকুড়া, মেদিনিপুর যাওয়ার যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও বর্ধমান শহরের সঙ্গে রায়না, মাধবডিহি, খণ্ডঘোষ ও জামালপুরের একাংশের সঙ্গে যোগাযোগের মূল মাধ্যম ওই রাস্তা। ১৯৭৩ সালে দামোদর নদের উপর নতুন সেতুর শিলান্যাস হয়। ১৯৭৮ সালে ‘কৃষক সেতু’ চালু হয়। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গেছে, যে কোনও সেতুরই গড় আয়ু ধরা হয় ৫০ বছর। সেই হিসেবে কৃষক সেতুর বয়স ৪৫-এ পড়েছে। সে জন্যেই এখন থেকেই ওই সেতুর পাশে নতুন সেতু তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।তাছাড়া সেতু তৈরির সময় দিনে আড়াই হাজারের মত গাড়ি চলত। এখন সেখানে দিনে ভারী যান-সহ ২৭ হাজার গাড়ি যাতায়াত করে।ওই রাস্তায় প্রতিদিন যানজট যেন নিয়মমাফিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ওই রাস্তা নিয়ে প্রতিদিন ৭-৮টি করে অভিযোগ জমা পড়ে। দফতরের দাবি, যানজটের জন্যে দীর্ঘক্ষণ ধরে ভারী যান দাঁড়িয়ে থাকায় সেতুরও ক্ষতি হচ্ছে।