ড্রাগ মাফিয়ারা মানসিক চাপ দেওয়ায় দশম শ্রেণির ছাত্র রাহুল কুমার সিংকে আত্মঘাতী হতে হল। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনলেন মৃতের পরিবার। শনিবার দুর্গাপুরের বেনাচিতির বিদ্যাসাগর পল্লীর বাসিন্দা সুরেশ প্রসাদ সিংয়ের ছোট ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র রাহুল বাড়ির মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। রবিবার দুর্গাপুরের বীরভানপুর মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে আসার পর তিন অভিযুক্ত ড্রাগ কারবারি বীরভানপুর মহাশ্মশানে এলে তাদেরকে ধরে রাহুলের পরিবার ও প্রতিবেশীরা গণপিটুনি দিয়ে কোকওভেন থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। রাহুলের বাবা সুরেশ প্রসাদ সিং ও রাহুলের দাদা অভিষেক কুমার সিং রাহুলের মৃত্যুর জন্য এই ড্রাগ মাফিয়াদের দোষী সাব্যস্ত করে প্রয়োজনীয় শাস্তির দাবি জানান।
জানা গেছে, আজ, সোমবার রাহুলের পরিবার রাহুলের মৃত্যুর জন্য তিন অভিযুক্ত মাদক কারবারি সহ দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের ড্রাগ মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশকে প্রয়োজনীয় কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করার আর্জি জানাবেন। জানা গেছে, রাহুল পলাশডিহার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। রাহুলের বাবা সুরেশ প্রসাদ সিং বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই রাহুল মানসিক চাপে ছিল। কয়েকদিন আগে রাহুল ওর মায়ের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা বার বার চাইছিল। কি কারণে টাকা চাইছে তা বলতে অস্বীকার করে রাহুল। কিন্তু রাহুল হঠাৎ করে শনিবার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করল। রাহুলের মৃত্যুর পর তাঁর মোবাইল মেসেজে সোনু কানিয়া রাহুলকে ড্রাগের টাকা দেওয়ার জন্য মানসিকচাপ সৃষ্টি করার প্রমাণ রয়েছে।’ তাছাড়া সুরেশ প্রসাদ সিংয়ের দাবি রাহুলের মৃত্যুর পর তাঁর মোবাইলের কভার থেকে এক ব্রাউন সুগারের পুড়িয়া পাওয়া গেছে।
সুরেশ প্রসাদ সিংয়ের অভিযোগ, এই সোনু কানিয়া, তারুল, বিশাল, অঙ্কিত এরা সব ড্রাগ মাফিয়া। এরা দুর্গাপুরের বেনাচিতির ধান্ডাবাগ স্টিল টাউন শিপের, আমরাই, রহিমপথ সেকেন্ডারি এলাকার বাসিন্দা। এরা আর্থিক স্বচ্ছল ঘরের স্কুল পড়ুয়াদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ড্রাগের নেশা ধরিয়ে দেয়। একবার ড্রাগের নেশা ধরে গেলেই সেই স্কুল পড়ুয়া নেশার টানেই ড্রাগ বিক্রি করে বেড়ায়।এই ভাবেই চেন সিস্টেমে গোটা দুর্গাপুর জুড়ে ড্রাগ নেটওয়ার্ক চলছে বলে অভিযোগ করেন সুরেশ প্রসাদ সিং। স্কুল পড়ুয়াদের কিভাবে নেশার কবলে পরিকল্পিত ভাবে ড্রাগ চক্র প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে তার বড় প্রমাণ হল এই দশম শ্রেণির ছাত্র রাহুল কুমার সিংয়ের অকাল মৃত্যু। রাহুলের বাবা রবিবার ছেলের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে দুর্গাপুরে ড্রাগ চক্রের পর্দা ফাঁস করে দেওয়ায় গোটা দুর্গাপুরের অভিভাবক মহলেও চাঞ্চল্য ছড়ায়। কেবলমাত্র রাহুলের পরিবারই নয়, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সকলেই চায় শিক্ষায়তন সহ দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকায় ড্রাগ মাফিয়াদের চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ কড়া হাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। না হলে রাহুলের মতো অকালে ঝরে পড়বে আরও কত জীবন। অপরদিকে ড্রাগ মাফিয়ারা ফুলে ফেঁপে উঠবে দুর্গাপুর জুড়ে।