কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম কলকাতার শ্মশানগুলিতে শেষকৃত্যের কাজে নিযুক্ত পুরোহিতদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানালেও দুর্গাপুর পুরসভার উদাসীনতায় এই দুর্দিনের বাজারে বীরভানপুর মহাশ্মশানের পুরোহিতদের এখনও দেহ পিছু মাত্র ১৫ টাকা দেওয়া হয়। চুক্তি থাকায় এই ১৫ টাকা বীরভানপুর মহাশ্মশানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের দেওয়ার কথা বলে জানান বীরভানপুর মহাশ্মশানের শেষকৃত্যের কাজে নিযুক্ত পুরোহিতরা। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাস থেকে নতুন ঠিকাদার মহাশ্মশানের দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই ১৫ টাকাও তাঁরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বীরভানপুর মহাশ্মশানের পুরোহিতদের।

সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা কলকাতার বিভিন্ন শ্মশানে শেষকৃত্যের কাজে নিযুক্ত ব্রাহ্মণদের প্রতি শেষকৃত্য পিছু ৩৮০ টাকা করে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন কলকাতার দেখাদেখি রাজ্যের অন্যান্য পুরসভাগুলি কবে এই ভাতা চালু করবে সেই দিকেই তাকিয়ে আছেন বিভিন্ন শ্মশানে শেষকৃত্যের কাজে নিযুক্ত ব্রাহ্মণরা। বীরভানপুর মহাশ্মশানের ব্রাহ্মণরাও নামমাত্র বেতনে শ্মশানে শেষকৃত্যের কাজ করছেন। কিন্তু সেটাও ঠিকমতো দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। বর্তমানে মৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে শেষকৃত্যের জন্য তাঁদের যেটুকু টাকা দেওয়া, সেই স্বল্প টাকাতেই কোন রকমে সংসার চালাতে হয় বলে জানান বীরভানপুর মহাশ্মশানের পুরোহিতরা।

বীরভানপুর মহাশ্মশানের পুরোহিতদের অভিযোগ, বীরভানপুর মহাশ্মশানে চারজন পুরোহিত দীর্ঘদিন ধরেই নামমাত্র দেহ পিছু ১৫ টাকায় শেষকৃত্যের কাজ করছেন। দাহ কার্য করতে আসা মানুষজন তাঁদের প্রিয় মানুষকে হারিয়ে মনকষ্টে ভুগলেও পুরোহিতদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কিছু প্রণামি দেন। তার উপরই তাঁদের অচল সংসার চালাতে হয়।

দুর্গাপুর পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্তদের আর্থিক সংকটের কথা বার বার বলা সত্ত্বেও দুর্গাপুর পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই প্রসঙ্গে পুরোহিতদের কার্যত এড়িয়ে চলেন বলে অভিযোগ পুরোহিতদের। বীরভানপুর মহাশ্মশান কমিটির এক কর্মকর্তা ও প্রধান পুরোহিত শ্যামল আচার্য বলেন, ‘পুরসভা প্রশাসনিক নিয়মেই আমার মন্দির ও জমির উপর বীরভানপুর মহাশ্মশান স্থাপন করলেও বাম আমল থেকেই দুর্গাপুর পুরসভা আমাদের ন্যায্য পাওনা ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছে।’ শ্যামলবাবু বলেন, ‘কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম যদি কলকাতার শ্মশানগুলির পুরোহিতদের ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন তাহলে কেন দুর্গাপুর পুরসভা আমাদের দুর্দশায় মানবিক মুখ দেখাবে না?’

শ্যামলবাবুর কথার জের টেনে শ্মশানে দাহ কাজ করতে আসা এক শ্মশান যাত্রী বলেন, ‘দুর্গাপুর পুরসভা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বীরভানপুর মহাশ্মশানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর, ২৪ ঘন্টা পানীয় জল, আলো, বৈদ্যুতিক চুল্লির সুব্যবস্থা ও সর্বোপরি শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যবস্থা করেছে। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পুরোহিতদের যদি প্রয়োজনীয় ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করতো তাহলে বীরভানপুর মহাশ্মশানের পুরোহিতদের ম্লান মুখগুলো আরও উজ্জ্বল হতে পারতো।’

বর্ধমান ডট কম-এর খবর নিয়মিত আপনার ফেসবুকে দেখতে চান?



Like Us On Facebook