দুর্গাপুরের অম্বুজা নগরীর বিখ্যাত দেবী চৌধুরানী ভবানী পাঠক ভারত মাতার আশ্রমে ভবানী মাতার মন্দিরের জাগ্রত মা আর মৎস্য ভোগ পান না। মন্দির সংলগ্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা প্রাচীন বৃহৎ ঝিলটি ধীরে ধীরে শুকিয়ে পড়ায় গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে ঝিলটিতে আর মাছ চাষও হয়না। প্রাচীন ঝিলটি পাল-সেন যুগ আমলের বলে শোনা যায়। জনশ্রুতি আছে, সেই সময়ে মন্দির সংলগ্ন স্থানে রানীদের স্নানের জন্য তৈরি হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ঝিলটি। ঝিলে যেতে রানীরা নাকি সুড়ঙ্গ পথ ব্যবহার করতেন। আজও দুর্গাপুরের অম্বুজা নগরী সেইসব সুড়ঙ্গ পথের সাক্ষ্য বহন করছে। ঝিলটিতে সেই সময় থেকেই মৎস্য চাষ করা হত মন্দিরের জাগ্রত মায়ের ভোগ প্রসাদের জন্য। ঝিলে পরিযায়ী পাখির আনাগোনাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লোকচক্ষুর আড়ালে জঙ্গলের মধ্যে থাকা পাল-সেন যুগে তৈরি এই মন্দির এলাকা ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী সহ বিপ্লবীদের গোপন আস্তানায় পরিণত হয়। বিপ্লবীরা দেশাত্মবোধক মন্ত্রে মন্দিরের ভবানী মাকে পুজো করে বিপ্লবী কাজকর্মে বের হতেন বলে জানা গেছে। মন্দিরের পুরোহিত সূত্রে জানা যায়, মন্দিরের প্রবেশ পথে ও মন্দিরের ভিতরে মায়ের বেদিতে খোদাই করা রয়েছে দেশাত্মবোধক মন্ত্র, ওঁ বন্দে মাতরম্ জয় জয় ভারতবর্ষম। এছাড়াও এই মন্ত্রের সঙ্গে আরও উচ্চারিত হয় ঐক্যম শরণম্‌ গচ্ছামি, সত্যম শরণম্‌ গচ্ছামি, স্বরাজ শরণম্‌ গচ্ছামি। এখনও এই মন্ত্রেই এই মন্দিরে মাতৃ আরাধনা হয়ে থাকে। এই মন্দিরে প্রতি মাসে কৃষ্ণা চতুর্দশীতে পুজো হয় এবং বাৎসরিক পুজো হয় কার্তিক মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে।

প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা নিয়ম মেনেই দুর্গাপুরের অম্বুজা নগরীর উপকন্ঠে ভবানী পাঠক দেবী চৌধুরানী আশ্রমের মন্দিরে মায়ের ভোগ রান্নায় নিয়ম করে মন্দির সংলগ্ন ঝিলের মাছ ধরে প্রতিদিন ভোগ প্রসাদ দেওয়া হত মাকে। কিন্তু গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিলে তিলে প্রাচীন ঝিলটি সংস্কারের অভাবে এবং কিছু মানুষের চক্রান্তে ঝিলটি নোংরা আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রাচীন ঝিলটি প্রায় বুজতে বসেছে। ঝিল তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলায় শীতের মরসুমে পারিযায়ী পাখিরাও আর এই ঝিলটিতে আসে না। ঝিলটি জলশূন্য হয়ে পড়ায় মাছ চাষও কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। তাই জাগ্রত মাও মৎস্য মুখ থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছেন।

মন্দিরের সেবাইত মিলন চট্টোপাধ্যায় আক্ষেপ করে বলেন, ‘ইতিহাস সমৃদ্ধ দর্শনীয় স্থান ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানীর আশ্রমের এই প্রাচীন মন্দিরের ঝিলটি বর্তমানে কৌশলে বুজিয়ে ফেলার একটা চক্রান্ত চলছে। ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এবং স্বচ্ছ জলের ঝিলটি আজ জলশূন্য হয়ে পড়ায় ঝিলে আর মাছ চাষ হয় না। তাই গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে মন্দিরের জাগ্রত মাকে আর আমরা মৎস্য ভোগ দিয়ে পুজো আরাধনা করতে পারি না। প্রাচীন মন্দির সংলগ্ন প্রাচীন ঝিলটিকে যদি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হত, তাহলে দুর্গাপুরে ইতিহাস সমৃদ্ধ ভবানী পাঠকের আশ্রমের মন্দির ও ঝিলটি দর্শনার্থীদের কাছে অন্য মাত্রা পেত।’

বর্ধমান ডট কম-এর খবর নিয়মিত আপনার ফেসবুকে দেখতে চান?




মন্দির সংলগ্ন ঝিল
Like Us On Facebook