ডিপিএলের বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে সিকিউরিটি ডিপোজিটের বিরুদ্ধে বামেদের ডেপুটেশন ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ডিপিএল প্রশাসনিক ভবনের সামনের এলাকা। তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় সহ সিপিএমের বেশ কয়েক জন যুব নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় মাথায় চোট পেয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও তিন বাম কর্মী। আহত কর্মীরা হলেন বিক্রম রায়, জয় সিংহ ও সঞ্জীব দে। তাঁদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
যদিও ডিপিএলের তৃণমূল কংগ্রেস শ্রমিক নেতা নয়ন মালাকার সিপিএম কর্মীদের মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে পাল্টা সিপিএম কর্মীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বলেন ঘটনার সময় আমাদের কর্মীরা এখানে ছিলই না। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের কর্মীদের সঙ্গে মারামারির কোন যোগ নেই। নয়ন মালাকার বলেন, এটা সিপিএমের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ফল।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক যে বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকদের দেওয়া হয়েছে। সেই বিলের সঙ্গে সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে অতিরিক্ত টাকা জমা নিচ্ছে রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড। সিপিএম সহ রাজ্যের সমস্ত বিরোধী দলগুলি রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব। সিপিএম কর্মীরা প্রথম থেকেই অতিরিক্ত সিকিউরিটি ডিপোজিটের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন।
সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষের স্বার্থে বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত সিকিউরিটি ডিপোজিট জমা নেওয়া নিয়ে আমরা প্রথম দিন থেকেই আন্দোলন করছি। আজকের ডেপুটেশনের জন্য পুলিশ ও ডিপিএল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমতিও নিয়েছি। তা সত্বেও বিনা প্ররোচনায় যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডারা দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় সহ সিপিএম কর্মীদের মারধর করল তার নিন্দার ভাষা নেই। পঙ্কজবাবু বলেন, আসলে বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে সিকিউরিটি ডিপোজিট ইস্যুটি তৃণমূল সরকারের জনবিরোধী একটি সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তে মানুষ হতাশ। তৃণমূল কংগ্রেসও বেশ কোণঠাসা হয়েছে দুর্গাপুরে। স্বাভাবিকভাবেই সিপিএম এই ইস্যুটি নিয়ে আন্দোলন করায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছে। তাই আন্দোলন ভয় দেখিয়ে ভাঙতে আজ বিনা প্ররোচনায় তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডারা আমাদের বিধায়ক সহ দলীয় কর্মীদের বেধড়ক মারধর করল। একই কথা বলেন সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়। তিনি বলেন, সারা রাজ্য জুড়ে যা চলছে আজ তার এক ছবি দেখল দুর্গাপুর। প্রতিবাদ করলেই মার খেতে হবে শাসক দলের গুন্ডাদের হাতে। বিদ্যুৎ বিলে সিকিউরিটি ডিপোজিট জমার প্রতিবাদ করায় আমরা মার খেলাম তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডা বাহিনীর হাতে। সন্তোষবাবু ও পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, আমাদের যতই মারধর করুক শাসক দলের গুন্ডারা, আমরা মানুষের স্বার্থে জনবিরোধী সমস্ত বিষয় নিয়ে একজোট হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এদিকে বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত সিকিউরিটি ডিপোজিট জমা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার বিষয়ে ডিপিএলের পিআরও স্বাগতা মিত্র বলেন, বিলের সঙ্গে যে টাকা ধার্য হয়েছে তা সম্পূর্ণ আইন মেনে করা হয়েছে। রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় অন্যান্য সংস্থা আগেই এই টাকা ধার্য করেছে। ডিপিএল সবে মাত্র এই নিয়ম চালু করেছে। স্বাগতা মিত্র বলেন, ২০১৬ এপ্রিল থেকে ২০১৭ মার্চ মাস পর্যন্ত টোটাল ইলেকট্রিক কনজামশনের উপর তিন মাসের গড় করে একটি টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে আইন মোতাবেক। যারা আগে জমা দিয়েছেন তাদের ওই টাকা বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ বিল জমা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অনেকে এই বিষয়টি বুঝতে ভুল করছেন। যারা বুঝে গেছেন তাঁরা আর এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি।