শুক্রবার থেকে লাগাতার বৃষ্টির জেরে পূর্ব বর্ধমান জেলার নবস্থা গ্রাম পঞ্চায়েত, ভাতার, গলসী-২ এবং কালনা মহকুমার মোট ১৫১টি কাঁচা বাড়ির আংশিক ক্ষতি হল। সোমবার সন্ধ্যে পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে,ইতিমধ্যেই জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দপ্তর প্রতিটি ব্লক ভিত্তিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। কালনা এবং কাটোয়া মহকুমায় ২টি করে মোট ৪টি স্পীড বোট তৈরী রাখা হয়েছে। এছাড়াও বন্যা কবলিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন এলাকাগুলিতে নৌকা এবং নৌকার মাঝিদের তৈরী থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কার্যত, পূর্ব বর্ধমান জেলায় কোথাও কোনো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলেও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তৈরি পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।
এদিকে, সোমবার পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এদিন বিকাল পর্যন্ত ডিভিসি থেকে ৩৮ হাজার ৭০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এদিন দুপুর পর্যন্ত দামোদর, অজয় ও ভাগীরথীর জল বিপদসীমার অনেক নীচে দিয়ে বইছে। পরিস্থিতি নজরে রাখা হয়েছে। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দপ্তরে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। ছুটি বাতিল করা হয়েছে বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দপ্তর, সেচ দপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলিতে। কোনো প্রাণহানির খবর নেই। খণ্ডঘোষ, কালনা, বর্ধমান ২-এর কয়েকটি এলাকায় সামান্য কিছু বৃষ্টির জল জমা হলেও তা চিন্তার কোনো কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দপ্তরের আধিকারিক বামদেব কুণ্ডু জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৮ মিলিমিটার। রবিবার পর্যন্ত ছিল ৭৮ মিমি। এদিন বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন,সোমবার সকাল পর্যন্ত জেলার কোথাও বন্যা পরিস্থিতির খবর পাওয়া যায়নি। সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিকে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
টানা প্রবল বর্ষণে দামোদর ব্যারেজে বিপদ সীমা বরাবর জল যাচ্ছে। সোমবার সকাল ৭ টা থেকে দফায় দফায় দুর্গাপুর প্রশাসনিক কার্য্যালয়ের কর্তারা দামোদর ব্যারেজের জল ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে ডিভিসির কাছে খোঁজ খবর নিতে থাকেন। সোমবার সকাল ৭ টায় দুর্গাপুর ব্যরেজ থেকে প্রায় ৩৩৩২৫ কিউসেক জল ছাড়া হয়। বেলা ১০ টায় ৩৪৪০০ কিউসেক বিকাল ৪ টায় ৩৮৭০০ এবং সর্ব শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭ টায় ৩৯২৫০ কিউসেক দামোদর থেকে জল ছাড়া হয়। এদিকে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ডিভিসি জলাধার থেকে জল ছাড়ার বিষয় নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। বর্ধমান ও হুগলির বিভিন্ন এলাকা প্লাবনের আশঙ্কায় রাজ্য সরকার সতর্কতা নিলেও ডিভিসির জল ছাড়ার বিষয়টিই এখন রাজ্য সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে। দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক শঙ্খ সাঁতরা বর্ধমান ডট কমকে বলেন, ‘দামোদর ব্যারেজে বিপদ সীমা বরাবর জল পৌঁচেছে। প্রশাসন দামোদর ব্যরেজের জল ছাড়ার বিষয়টি কড়া নজর রেখেছে। প্রতি ঘন্টায় প্রশাসনিক কর্তারা মনিটরিং করছেন ডিভিসি কত কিউসেক জল ছাড়ছে।
এদিকে লাগাতার বৃষ্টিতে দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ১৩, ২০, ২১, ৩৯, ৪১ ও ৪২ নং ওয়ার্ডের প্রায় ৫০০ অধীক পরিবার এর মধ্যেই বর্ষার জলে নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। দামোদর ব্যারেজের জল বিপদ সীমা বরাবর বইতে থাকায় শহরের নির্গত জল দামোদরে নামতে বেশ সময় লাগছে বলে জানা গেছে। প্লাবিত এলাকা গুলিতে পৌর নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে বিপর্যয় মোকাবিলায় শাসক বিরোধী উভয় দলই প্রশাসনের সঙ্গে কাধেঁ কাঁধ মিলিয়ে চাল ডাল ত্রিপল বিলি করতে নেমে পড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।দুর্গাপুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কমিশনার অমিতাভ দাস ও দুর্গাপুর মহকুমা শাসক শঙ্খ সাঁতরা জানান মানুষের দুর্ভোগের সমস্যা সমাধানের সব রকমের চেষ্টা করা হচ্ছে। দুর্গত এলাকা গুলিতে মানুষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে।