‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’- স্বামী বিবেকানন্দের এই বিখ্যাত বাণীই হল বিবেকানন্দ রোডের বাসিন্দা চৈতালির জীবনের মূলমন্ত্র। ইস্পাত নগরীর রাস্তার কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল ও পশু-পক্ষিদের ‘মসিহা’ দুর্গাপুরের চৈতালি রায়। এরা বিপদে পড়লে চৈতালি ছুটে যান, তুলে নিয়ে আসেন তার নিজ বাড়িতে। ওই সমস্ত অসুস্থ প্রাণীদের সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিনি নিজের কাছে রাখেন। নীরবে এই পরিষেবা দিয়ে আজ তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দুর্গাপুরে।
রাস্তার কুকুর বেশির ভাগ সময় রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পরে ঠিকমতো চিকিৎসা না পেয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। না খেতে পেয়ে মারা যায়। এদের পরিচর্যা করার জন্য খুব কম মানুষ এগিয়ে আসেন। অবলা পশু-পক্ষিদের প্রতি এত ভালবাসা দেখে তাঁর স্বামী দিপ্ত রায় অভিভূত হন এবং তিনিও এগিয়ে আসেন চৈতালিকে মানসিক ও অর্থনৈতিক ভাবে সহযোগিতা করতে। চৈতালির স্বামী দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার একজন সাধারণ কর্মচারি। এই পশুপ্রেমী দম্পতির সংসারে তাদের দুটি মাত্র কন্যা। দিপ্ত রায় তার উপার্জনের টাকাতেই তাদের দুই কন্যার দেখভালের পাশাপাশি পশু-পক্ষিদেরও দেখাশুনা করেন। পশুপ্রেমী দম্পতি থাকেন দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর বিবেকানন্দ রোডের সেল আবাসনে।
পরবর্তী সময় এই দম্পতি একটি পশু চিকিৎসালয় খুলে ফেলেন। নামকরণ করেন ‘আশ্রয়’। আহত পশু-পক্ষিদের সুস্থ করে তাদের জগতে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, পশু-পক্ষিদের স্বাস্থ্য সম্মত খাবারের তালিকা অনুযায়ী পশু-পক্ষিদের খাবার পরিবেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন। চিকিৎসা সহ অস্ত্রপচারে সাহায্য করেন বিশিষ্ট এক চিকিৎসক।
বর্তমানে পশুপ্রেমী দম্পতির আশ্রয়ে রয়েছে ১৫টি কুকুর, ৯টি বেড়াল, ১টি ঘোড়া সহ বেশ কিছু পাখি। চৈতালি জানান,”ঘোড়াটিকে আহত আবস্থায় পেয়েছিলাম একটি মেলা থেকে। বহু আইনের বেড়াজাল পার করে বর্তমানে ঘোড়াটিকে সুস্থ করে তুলেছি।” চৈতালি আরও জানান,”সরকারি অনুদান ছাড়াই একক প্রচেষ্টায় আমরা ২০১৫ সালে ‘আশ্রয়’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়ে তুলি। আমাদের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক মানুষ এই সংস্থায় যুক্ত হচ্ছেন এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সকলে মিলে অর্থের জোগান দিয়ে এখন ‘আশ্রয়’ অনেকটাই সাবলম্বি। শখের বসে নয়, মানবিক কারণে আহত পশু-পক্ষিদের আমরা সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিচ্ছি। স্থানীয় সকলেই আমাদের নানাভাবে সাহায্য করেন। সকলের সাহায্যে আমরা পশু-পক্ষিদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিতে পারছি। সকলের সহযোগিতা না পেলে আমরা এ কাজে সফল হতাম না। “
আশ্রয়ে পশু-পক্ষিদের শুশ্রূষা দেখে স্থানীয় এক শিক্ষক আশিষ বন্দোপাধ্যায় বলেন,”ওরা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে যেভাবে পশু পাখিদের সেবা করে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিচ্ছে তা এককথায় অতুলনীয়। ওদের পাশে সকলের দাঁড়ান উচিৎ। আমিও ওদের পাশে রয়েছি”।