স্কুলে ভর্তির জন্য কারও কাছে ৫ আবার কারও কাছে ৭ লাখ ডোনেশন নেওয়ার অভিযোগ, তার পর অনিয়মিত ক্লাস সহ স্কুলের রেজিস্ট্রেশন না থাকায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এত দিন ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ছিলই। এর পর স্কুলের প্রিন্সিপ্যালের এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ উঠলে আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ে শুক্রবার। তার বদলা নিতে স্কুলের আবাসিক ছাত্রছাত্রীরা শুক্রবার রাতভোর মুখে রুমাল বেঁধে ভাঙচুর চালায় স্কুলে। স্কুলের অফিস, জানালার কাঁচ, এসি মেসিন, স্মার্ট ক্লাস রুম ও স্কুলের সকল আসবাব পত্র সহ স্কুল বাস সব কিছু ভাঙচুরের পর স্কুলের প্রিন্সিপ্যালের গাড়িটিতেও ভাঙচুর চালায় স্কুলের আবাসিক ছাত্র ছাত্রীরা। কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই স্কুলে।
দুর্গাপুরের নারায়না স্কুলে শুক্রবার রাতভোর স্কুলের আবসিক ছাত্রছাত্রীরা ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সমস্ত রাগ উগরে দিল। এই ঘটনায় দুর্গাপুরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিউ টাউনশিপ থানার পুলিশ শনিবার স্কুলে পৌঁছায়। জানা গেছে দক্ষিণ ভারতীয় স্কুলগুলির ঢঙ্গে গত কয়েক বছর দুর্গাপুরে সিবিএসই অনুমোদিত প্রচার করে একটি ইংরাজী মাধ্যম স্কুল খোলা হয়। স্কুলটি আর্ন্তজাতিক মানের দাবি করে শহরে বিশাল বিশাল হোর্ডিং-এর মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করা হয়। অভিভাবকরা বিশাল অঙ্কের ডোনেশন দিয়ে ছেলে মেয়েদের নিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এই নারায়না স্কুলে ভর্তি করে দেয়। কিন্তু বেশ কিছু দিন চলার পর স্কুলে নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় অভিভাবকরা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন স্কুলটি আদতে সিবিএসই অনুমোদিত নয় এবং এখানের শিক্ষক শিক্ষিকারা ঠিকমত বেতন না পাওয়ায় স্কুলের ক্লাস নেন না বলে অভিযোগ। এই সব অনিয়মে ভরা স্কুলটিকে নারায়না স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রচারের তোড়ে এত দিন চালিয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল মাধব আচার্য্য শুক্রবার একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধর করায় সকল ছাত্রছাত্রীরা স্কুল কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষোভে ফেটে পড়ে রাতভোর ভাঙচুর চালায়।
স্কুলের অভিভাবকদের অভিযোগ নারায়না স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ছেলে মেয়েদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তাই ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের মানসিক যন্ত্রনা সহ্য করতে না পারায় রাগ উগরে দিয়েছে স্কুলের উপর। অভিভাবকরা অনেকেই স্কুল ভাঙচুরের ঘটনায় অনুতপ্ত না হয়ে উল্টে স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল ও স্কুলের কো-অর্ডিনেটর সহ স্কুলের মাথাদের প্রতারনার অভিযোগে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। গত কয়েকমাস ধরে দুর্গাপুরের বিভিন্ন স্কুলে ফি-বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন ইস্যুতে অভিভাবকদের আন্দোলনের পর প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পরও শুক্রবার ফের হেমশীলা মডেল স্কুলে ফি সহ বেনিয়মের অভিযোগে অভিভাবকদের বিক্ষোভে পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের অভিযোগ ওঠে। এরপর নারায়না স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে ভাঙচুর চালানোয় বার বার শিক্ষাঙ্গন কলুষিত হওয়ায় এবার দুর্গাপুরের শিক্ষা তালুককে নিয়েই প্রশ্ন উঠল।