শনিবার শ্রীহরিকোটা থেকে সূর্যের কক্ষপথের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিল ভারতীয় মহাকাশ যান ‘আদিত্য-আদিত্য-এল১’। পিএসএলভি-সি৫৭ রকেটে সওয়ার হয়ে মহাকাশ যানটি সকাল ১১ টা ৫০ মিনিট নাগাদ সফলভাবে সূর্যের কক্ষপথের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। আদিত্য-আদিত্য-এল১ এর সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ গবেষণায় আরও একধাপ এগিয়ে গেল ভারত। সফল চন্দ্রাভিযানের পর আবার সূর্যাভিযান, উন্নতশীল দেশ হিসাবে মহাকাশ গবেষনায় গোটা বিশ্বে ভারতের স্থান আরও উজ্জ্বল হল একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সফল সূর্যাভিযানের লক্ষ্যে দিনরাত এক করে যে দলটি এই কাজ করছে, সেই দলেরই অন্যতম এক সদস্য হলেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির কৌশিক মণ্ডল। কেরলের তিরুবনন্তপুরমে সূর্যাভিযানের সাথে যুক্ত ইসরোর দলটির সঙ্গে শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত নিজের দায়িত্বে অবিচল ছিলেন কৌশিক।
চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্য ইসরোর ওই দলটির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। কৌশিকের দাবি, সূর্যের দিকে চোখ রেখে উড়তে চলা মহাকাশযানটিও সাফল্যের সঙ্গে কক্ষপথে ঢুকবে। পিএসএসএলভি রকেটে সওয়ার হয়ে সূর্যের দিকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার এগিয়ে মধ্যাকর্ষণ কম রয়েছে, সে জায়গা দিয়ে কক্ষপথে ঢুকবে মহাকাশযানটি। সেখান থেকে খুব কম জ্বালানিতে সৌরমণ্ডল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে মহাকাশযানটি।
আদিত্য-আদিত্য-এল১ এর ‘ভার্চুয়ালি লঞ্চ’ ঠিকঠাক হল কি না, সেটা দেখারই দায়িত্বে ছিলেন কৌশিক। তাঁর কথায়, ‘যে রকেটে করে মহাকাশযানটি সূর্যের দিকে উড়বে, তার পুরো যাত্রাপথটি নজরে রাখা হবে।’ সামান্য বিচ্যুতি ঘটলেই ‘গ্রাউন্ড স্টেশন’ থেকে বিশেষ নির্দেশ পাঠিয়েই তাকে কক্ষপথে ফিরিয়ে আনা হয়।
কৌশিক এখন রয়েছেন তিরুবনন্তপুরমে ইসরোর সেন্টারে। কৌশিক আদতে মেমারির মেলনা গ্রামের বাসিন্দা। বাবা সাধনচন্দ্র মণ্ডলের গ্রামের ভিতর ছোট মুদির দোকান আর আছে চার-পাঁচ বিঘা জমি। কৌশিকের ভাই শৌভিক আরামবাগের একটি কলেজের শিক্ষক। কৌশিকের কথায়, ‘আমরা দুই ভাই নানা প্রতিকূল অবস্থায় বড় হয়েছি। চেয়েচিন্তে পড়াশোনা করেছি। বইয়ের অভাব মিটিয়েছে গ্রন্থাগার আর বন্ধুরা।’
২০০৮ সালে স্থানীয় বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন কৌশিক। সেখান থেকে কাটোয়ার জাজিগ্রামে পলিটেকনিকে ভর্তি হন কৌশিক। বর্ধমানের ইউআইটি থেকে ইলেক্ট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন নিয়ে স্নাতক হন তারপর ২০১৪ সালে শিবপুরে এম-টেকে ভর্তি হন। সে বছরই ইসরোতে যোগ দেওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন। ২০১৬ থেকে ইসরোতে রয়েছেন কৌশিক। ছেলের সাফল্য দেখতে তিরুবনন্তপুরম চলে গিয়েছেন কৌশিক মন্ডলের বাব-মা সাধন মন্ডল ও সরস্বতী মন্ডল। তাঁদের কথায়, ‘অনেক কষ্ট করে ছেলেদের পড়িয়েছি। এই সাফল্য তো শুধু ছেলের নয়, গোটা দেশের। বিজ্ঞানের।’ কৌশিক বলেন, ‘উষ্ণায়ণ, সৌরঝড় সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যাবে এই অভিযান থেকে। আদিত্য-আদিত্য-এল১ এর সফল উৎক্ষেপণ মহাকাশ গবেষণায় ভারতকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।’