বুধবার সকালে ছিল দুর্গাপুরের গ্রাফাইট ইন্ডিয়ার গেটের সামনে শ্রমিকদের স্বার্থে জনসভা। এই সভায় পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি জীতেন্দ্র তিওয়ারি এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়াল বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের এই দুই বিধায়ক তথা শাসকদলের জেলা সংগঠনের প্রভাবশালী দুই নেতা দলের দু’মুখো নীতির অভিযোগ তুলে ক্ষোভ উগরে দেন। শাসকদলের দুই নেতার প্রকাশ্য সমাবেশে এইভাবে ক্ষোভ প্রকাশে জেলা জুড়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়।

দু’নেতাই এদিন দলের বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খুলে বলেন, ‘দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানেই আন্দোলন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কিন্তু আমাদের আন্দোলন গড়ে তুলতে দেওয়া হচ্ছে না। কলকাতার মন্ত্রীরা আমাদের সমস্ত কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা শুধু কলকাতার উন্নয়ন চান, আর স্থানীয় মানুষের কাছে আমদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছিনা।’ গত কয়েকদিন ধরেই তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি, বিধায়ক তথা আসানসোলের মেয়র জীতেন্দ্র তিওয়ারি আসানসোলকে স্মার্ট সিটির আর্থিক প্যাকেজ থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছেন। আসানসোলকে স্মার্ট সিটি প্রকল্পের টাকা থেকে বঞ্চিত করার জন্য নাম নিয়ে পুরমন্ত্রীর দিকে আঙুল তোলেন জীতেন্দ্র তিওয়ারি। দল বিরোধী কথা বলায় দলের পক্ষ থেকে ১৮ ডিসেম্বর কলকাতায় জীতেন্দ্র তিওয়ারিকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্য কোন দলীয় কর্মসূচিতে জেলা সভাপতিকে যেতে নিষেধ করা হয়েছে বলে দাবি করেন জীতেন্দ্র তিওয়ারি।

জীতেন্দ্র তিওয়ারি এদিন দুর্গাপুরে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের ডাকে সাড়া দিয়ে দুর্গাপুরে শ্রমিকদের স্বার্থে আয়োজিত জনসভায় এসে দলীয় মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সরব হলেন। জীতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে এদিন দলের একাংশের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়ালও। দলের জেলা কমিটির দুই কান্ডারী এদিন দলের বিরুদ্ধে বঞ্চনা, মন্ত্রীদের দুর্ব্যবহার নিয়ে সরব হন। এদিন জীতেন্দ্রবাবু কলকাতার এক মন্ত্রীকে টার্গেট করে বলেন, ‘দলটা করি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। আপনাকে দেখে দলে আসিনি আমরা। আপনার নির্দেশে দল করবো না। আমরা স্থানীয় মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। আর কলকাতার মন্ত্রীরা আমাদের স্থানীয় মানুষের স্বার্থে কাজ করতে দিচ্ছেন না। আমি আসানসোলের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। স্মার্ট সিটির জন্য এতো পরিশ্রম করলাম আর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আসানসোলকে বঞ্চিত করলো। আমি একটা গোপন চিঠি দিলাম আর উনি বললেন আমি নাকি বিজেপি হয়ে গেছি। আমাকে বিজেপিতে চলে যেতে বললেন।’ জীতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘দল বললে এক মিনিটে দলের সমস্ত পদ থেকে পদত্যাগ করে দেব। আর আজকের পর হয়তো আর জেলা সভাপতি বা বিধায়ক হিসেবে আসবো না। জেলার নাগরিক হিসেবে আপনাদের পাশে থাকবো।’ এদিন জীতেন্দ্রবাবু নিজের দলের মন্ত্রীদের চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘দিদি যদি কলকাতার মন্ত্রীদের জেলার ভোটের দায়িত্ব না দিয়ে আমাদের জেলার সমস্ত দায়িত্ব আমাদের উপর ছেড়ে দেন, আগামী বিধানসভাতে আমরা জেলার ৯ টি আসনই দিদিকে তুলে দেবো। কিন্তু সেটাতো এইসব কলকাতার মন্ত্রীরা হতে দেবেন না, কারণ তাহলে তাঁদের হাত থেকে জেলার রাশ চলে যাবে সেটা জানেন তাঁরা।’ তিনি শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসা করে বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর জনপ্রিয় নেতা। তিনি ছয় মাস বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছেন।’ জীতেন্দ্র তেওয়ারির মুখে এই ভাষণ শুনে দলীয় কর্মীরা হাততালি দিয়ে সমর্থন করেন।

এদিন জীতেন্দ্র তিওয়ারির সুরেই দলের বিরুদ্ধে বঞ্চনা, মন্ত্রীদের দুর্ব্যবহার ও অসহযোগিতা অভিযোগ তুলে সরব হন পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। তিনি বলেন, ‘আমিকে দলের শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অথচ পিছন থেকে গোঁজ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।’ বিশ্বনাথ পাড়িয়াল এদিন দলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন। ‘এভাবে দলকে যারা শেষ করে দিচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে দলের শীর্ষ নেতাদের। নাহলে দল থাকবে না। আমরা প্রথম দিন থেকে দল করছি আর কিছু মীরজাফর দিদিকে ভুল বুঝিয়ে দিদির পিঠে ছুরি মারছে।’ বিশ্বনাথ পাড়িয়ালও জীতেন্দ্র তেওয়ারির মতো বলেন, ‘প্রয়োজনে দলীয় পদ ত্যাগ করবো। বিধায়ক পদও ছেড়ে দেবো এক মিনিটে। কিন্তু যে অন্যায় করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো।’

Like Us On Facebook