রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়েও কয়েন নিয়ে চলছে তীব্র অসন্তোষ। দুর্গাপুর জুড়ে অজ্ঞাত কারণে ছোট এক টাকা ও দশ টাকার কয়েন অঘোষিত অচল হয়ে পড়েছে। দৈনন্দিন লেনদেনে ব্রাত্য এখন কয়েন। দোকানে বা বাসে একসঙ্গে কয়েকটি কয়েন দিলেই উভয়পক্ষের মধ্যে অশান্তি তীব্র হচ্ছে। সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ী সকলেই কয়েন যন্ত্রনায় ভুগছেন। যত দিন যাচ্ছে ততই কয়েন যন্ত্রনা তীব্র হচ্ছে দুর্গাপুর শহরে। দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসন, দুর্গাপুর পুরসভা ও দুর্গাপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কর্তাব্যক্তিরা এব্যাপারে উদাসীন বলে অভিযোগ।
নোট বাতিলের পর বাজারে অত্যধিক মাত্রায় কয়েনের জোগান ব্যবসায়ীদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট থেকে বড় প্রায় সকলের কাছেই কয়েনের পাহাড় জমে উঠতে শুরু করেছে। ফলে প্রায়ই কয়েন নিয়ে বাজার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীদের হাতে হাজার হাজার টাকার কয়েন জমা হতে থাকায় ক্ষোভ এবং অশান্তি দুইই ক্রমশ বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা আর কেউ খুচরো নিতে চাইছেন না। সাধারণ মানুষও নাছোড়বান্দা। সবাই চাইছেন কয়েনমুক্ত হতে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা থাকলেও কয়েন গোনার জন্য সময় ও কর্মীর অভাব দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্কও কয়েন নিতে অনীহা প্রকাশ করছে বলে অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ী থেকে গৃহস্থ।
নোট বাতিলের পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীদের চাপে পড়ে কয়েন নিয়ে দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসন, দুর্গাপুর পুরসভা ও দুর্গাপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কর্তাব্যক্তিরা কয়েনের লেনদেন নিয়ে উদ্যোগ নিলেও পরবর্তী সময়ে সেই উদ্যোগ আর দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, যেভাবে স্মার্ট সিটি, গ্রীন সিটির প্রচার হল বা সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ, পচা মাংসের বিরুদ্ধে অভিযান অথবা প্লাস্টিক বর্জন নিয়ে কমিটি গঠন করে বাজারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে, একইভাবে খুচরো পয়সার অঘোষিত অচলাবস্থার বিরুদ্ধেও কমিটি গঠন করে সবধরণের কয়েন চালু নিয়ে সচেতনতার বিশেষ অভিযান করা যেত বলে মত অনেক বিশিষ্ট মানুষের। প্রশাসনের গঠিত কমিটির কর্তারা যদি আন্তরিক ভাবে বাজারে খুচরো পয়সা নিয়ে বিশেষ করে ছোট কয়েন বড় কয়েনের অঘোষিত অচলাবস্থার বিরুদ্ধে ক্রমাগত মাইকিং ও প্রচার করতেন তাহলে হয়ত সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশকে কয়েন সমস্যা নিয়ে দৈনন্দিন ঝুটঝামেলায় পড়তে হত না বলে মত অনেক ছোট ব্যবসায়ীর।
এদিকে দুর্গাপুরের কয়েন সমস্যায় সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ভিক্ষুকরা। যাদের একটাকা দুই টাকার উপর নির্ভর করেই রুজি রোজগার হয়। সেখানে বাজারের ব্রাত্য ছোট এক টাকার কয়েন ছাড়াও অন্যান্য কয়েন নিয়ে ভিক্ষুকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। অঘোষিত অচল কয়েনগুলি তাঁদের কাছ থেকে দোকানিরা না নেওয়ায় শহরের অনেক ভিক্ষুক কার্যত প্রায় দিন উপবাসের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ভিড়িঙ্গী কালী মন্দিরের সামনে পথেবসা ভিক্ষুকরা।
কাদা রোডের রঙ্গীলা বিবি, ডিভিসি মোড়ের বস্তির মেয়ে মঞ্জু হাজরা বা বেনাচিতির নতুন পল্লীর রুইদাস পাড়ার বাসিন্দা ভিক্ষুক মীরা দেওঘরিয়া দীর্ঘদিন ধরে জেলার প্রাচীন মন্দির ভিড়িঙ্গী কালী মন্দিরের সামনে পথে বসে ভিক্ষা করছেন। ভিক্ষাবৃত্তি থেকে সংগ্রহীত খুচরো পয়সা এতদিন বড়বড় দোকানে দিয়ে পরিবর্তে নোট সংগ্রহ করে জীবন যাপন করতেন বলে জানান। কিন্তু নোটবন্দির পর আর সেইদিন নেই ভিক্ষুকদের। এখন বাজারে খুচরো পয়সা দিতে গেলে ব্যবসায়ীরা তেড়ে আসেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী রঙ্গীলা বিবি, মঞ্জু হাজরা বা মীরা দেওঘরিয়াদের। কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তি থেকে সংগৃহীত খুচরো পয়সা দোকানিকে দিয়ে পরিবর্তে নোট না পেলে বাচ্চারা অভুক্ত থাকবে। মুখের হাসি ম্লান হবে। কয়েন নিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় দগ্ধ রঙ্গীলা বিবি, মঞ্জু হাজরা বা মীরা দেওঘরিয়ারা এখন নিজেদের কপালকেই দায়ী করেছেন এর জন্য। একইভাবে দুর্গাপুরের নামো সগরভাঙার ভিক্ষুকরাও কয়েন নিয়ে চরম সমস্যার কথা জানালেন। কয়েন যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিতে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী থেকে শহরের বুকে বেঁচে থাকা ভিক্ষুকরা সকলেই এখন প্রশাসনের মুখাপেক্ষী হয়ে আশায় দিন গুনছেন।