প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জীবন যুদ্ধের দ্বিতীয় ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার লড়াইয়ে নামল অয়ন। অয়নের বাড়ি বেলকাশ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝিঙুটি গ্রামে। অয়ন সোম (১৭) তালিত গৌড়েশ্বর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবছর সে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। বাবার সাহায্য নিয়ে হুইল চেয়ারে বসে অয়ন পৌঁছায় তার পরীক্ষা কেন্দ্র বর্ধমান পৌর উচ্চবিদ্যালয়ে। স্কুল কর্তৃপক্ষ তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করে রাখেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। আর পাঁচটা ছাত্রের মতো অয়ন স্বাভাবিক নয়। তাই অয়ন স্কুলের নীচের তলায় লাইব্রেরি রুমে একাই বসে পরীক্ষা দিল। অতিরিক্ত এক ঘন্টা সময়ও বরাদ্দ করা হল।
অয়ন মাসকুলার ডিসট্রফি জাতীয় জেনেটিক অসুখে আক্রান্ত। এই অসুখে মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়ে। কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। অয়নের লড়াই দু’ধরণের, একদিকে তার শারিরীক অক্ষমতা অপরদিকে মায়ের স্নেহ ও অনুপ্রেরণা থেকে বঞ্চিত। ঠাকুরমা, বাবা ও কাকার কাছেই বেড়ে ওঠা। আজ বাংলা পরীক্ষা দিয়ে অয়ন বলে, ‘একটি প্রশ্ন বাদ দিয়ে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। পরীক্ষা ভালই হয়েছে। তবে জানেনতো দু’টি প্রশ্নের উত্তর লেখার পর আমার হাতে প্রচণ্ড ব্যাথা হতে শুরু করে। আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি সমস্ত উত্তর লিখতে পারব কিনা। কয়েক মিনিটের জন্য লেখায় বিরতি দিই, তারপর আবার লিখতে শুরু করলাম। ঠাকুরের আশীর্বাদে একটি বাদে সব প্রশ্নেরই উত্তর লিখলাম। শরীর যদি সুস্থ থাকে তাহলে আমার লক্ষ্য স্নাতক হওয়া। সপ্তম শ্রেণিতে পড়া কালীন আমার শরীরে এই রোগের উপস্থিতি ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যায়। আমি প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারি না। শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিতে যাই। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও গৃহশিক্ষকদের সহায়তায় আজ আমি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারছি। এছাড়াও বাবা, কাকা ও ঠাকুরমার বিশেষ প্রেরণাই আমার একমাত্র অবলম্বন।’