জামালপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের ২ কর্মী খুনের ঘটনায় ১৮জন সিপিএমের নেতা-কর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেন বর্ধমানের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সেখ মহম্মদ রেজা। এই ঘটনায় আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে বড়সড় জয় পেল শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার সকাল থেকেই ২০১০ সালের এই জোড়া খুনের ঘটনায় রায়দানকে ঘিরে উপচে পড়েছিল ভিড়।

বুধবার বর্ধমান আদালতের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের ভিড়ে ঠাসা এজলাসে বর্ধমান সংশোধনাগার থেকে নিয়ে আসা হয় ১৮জন সিপিএমের নেতা ও কর্মীকে। মঙ্গলবারই এই ১৮জন সিপিএমের নেতা-কর্মীকে হেফাজতে নেয় আদালত। সরকার ও বিরোধীপক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল শোনার পর
বিচারক সেখ মহম্মদ রেজা মঙ্গলবারই জানিয়ে দেন বুধবার তিনি এই মামলার রায় ঘোষণার পাশাপাশি অভিযুক্তদের বক্তব্যও শুনবেন। যথারীতি এদিন বিচারক অভিযুক্ত মিলন মালিক এবং তাঁর দুই ছেলে মনোজ মালিক ও ঝণ্টু মালিক, সুদেব মালিক, লখীরাম সোরেন, রাম মাণ্ডি, স্মরজিত মাঝি, সুজিত মাঝি, কার্তিক মাঝি, বিকাশ মালিক, বিশ্বনাথ দলুই, উজ্জ্বল সাঁতরা, কমল পোড়েল, জয়ন্ত পোড়েল, অশান্ত পোড়েল, হাবল সাঁতরা, উদয় মাঝি এবং রণজিত মাঝির বক্তব্য শোনেন।

এরপর দুপুর প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ বিচারক তাঁর রায় ঘোষণা করেন। বিচারক এই ১৮জন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুটি মামলার মধ্যে খুনের মামলায় সকলকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। টাকা অনাদায়ে আরও ৬ মাস জেলের নির্দেশ দেন। অন্য একটি ধারায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৩ বছর জেল এবং ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। টাকা অনাদায়ে আরও ১ মাস জেল। এই দুটি রায়ই একসঙ্গে চলবে বলে তিনি জানান। এদিকে, এই রায় ঘোষণার পরই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সাজাপ্রাপ্তরা। এজলাস থেকে বেড়িয়ে তাদের জেল হেফাজতে নিয়ে যাবার পথে অভিযুক্তরা জানান, তাঁরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। রাজনীতির শিকার হয়েছেন তাঁরা।

উল্লেখ্য, এই ১৮জন অভিযুক্তদের মধ্যে মিলন মালিকের নেতৃত্বেই ২০১০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তৃণমূল সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। সিপিএমের সশস্ত্র সমর্থকরা তৃণমূল কর্মীদের মারধর, খুন, বাড়িতে আগুন সহ দলীয় পার্টি অফিস ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে। এরপর তারা জামালপুরের উজিরপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ কর্মী পাঁচু রুইদাসের বাড়িতে হামলা চালায়। সেই সময় তিনি বাড়িতে ভাত খাচ্ছিলেন। অভিযোগ, সেই অবস্থায় তাকে বল্লমের খোঁচায় বিদ্ধ করে খুন করা হয়। একইভাবে অমরপুরের বাসিন্দা তৃণমূলের সংগঠক ইশা হক মল্লিককেও খুন করে সিপিএম সমর্থকেরা। এরপর তাদের দেহ লোপাটের জন্য নিয়ে চলেও যাওয়া হয় গ্রাম থেকে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ ওই মৃতদেহ উদ্ধার করে। এই ঘটনায় পাঁচু রুইদাসের ভাইপো প্রবীর দাস জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিত পুলিশ মামলা রুজু করে।

অন্যদিকে, অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী স্বপন বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সেদিনের ঘটনার বিষয়ে যথাযথ প্রমাণ ছাড়াই সিপিএমের ১৮জনকে সাজা েওয়া হয়েছে। তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। অপরদিকে, এদিন জামালপুর সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য ভোলা পাল জানিয়েছেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই দুজন খুন হন। কিন্তু দ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই সিপিএম নেতা কর্মীদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানিয়েছেন,অভিযুক্তদের মধ্যে হাবল সাঁতরা এবারে জামালপুরের মাঠনসিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্রও দাখিল করেছেন। ভোলা পাল জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবার বিশ্বনাথ দলুইয়ের মেয়ের বিয়ে। এই ঘটনায় গোটা পরিবার বিপদের মুখে পড়ল। যদিও দলীয়ভাবে তাঁরা সকলেরই পাশে আছেন। যদিও এই রায়ের পরই নিহত পাঁচুগোপাল রুইদাসের স্ত্রী কল্যাণী রুইদাস এবং ইশা হক মল্লিকের স্ত্রী রেহেনা মল্লিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, তাঁরা চান অভিযুক্তদের ফাঁসি হোক।

Like Us On Facebook