বনদফতরের ধারাবাহিক প্রচারে গ্রামবাসীরা সচেতন হতেই আউশগ্রামের জঙ্গলমহল এলাকার অখ্যাত গ্রাম হেদোগড়িয়া এখন ময়ূর-ময়ূরীদের অবাধ বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, যার টানে ভীড় জমাচ্ছেন দূরদুরান্তের পর্যটকরা। পাল্টাচ্ছে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র। ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ার ভাবনা জেলা পরিষদের। হেদোগড়িয়া গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলের মধ্যে ইতিউতি ঘুরে বেড়ায় ময়ূরের দল। কখনও আবার দলবেঁধে চলে আসে লোকালয়ে। ওদের এক ঝলক দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন পর্যটকরা।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে আউশগ্রাম সংলগ্ন কাঁকসার দেউল এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকটি ময়ূর ছাড়া হয়েছিল।স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের জন্য বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করতে পারাতেই ময়ূরের বংশবিস্তার ঘটে। তারা এখন আশেপাশের জঙ্গলেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেউল ও আদুরিয়া জঙ্গলকে কেন্দ্র করে ৩০ কিমি বৃত্তের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৫০০-রও বেশী ময়ূর রয়েছে বলে বনদফতর সূত্রে জানা গেছে। গত ৩ বছর আগে যার সংখ্যা ছিল সীমিত।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আউশগ্রামের হেদোগরিয়া ছাড়াও প্রেমগঞ্জ, রাঙাখুলা, আদুরিয়া প্রভৃতি গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় বর্তমানে দলে দলে ময়ূর ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, দু’বছর আগে মাঝেমধ্যে চোখে পড়লেও এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ময়ূর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।আউশগ্রামের আদুরিয়ায় লোকালয়ের কাছাকাছি ময়ূরের দল চলে আসছে। এক একটি দলে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টি ময়ূর থাকছে। জঙ্গল ছেড়ে মাঝেমধ্যে পাশের মাঠগুলিতে চলে আসছে ময়ূর-ময়ূরী সহ শাবকরাও। আর অনেকেই এখন জঙ্গলে আসছেন ময়ূরের দল দেখার জন্য। এরকমই ময়ূরের টানে আসা পর্যটক শ্রীলেখা রায় জানান, শহরের কোলাহল থেকে শতযোজন দূরে থাকা আউসগ্রামের জঙ্গলমহল এমনতেই আকর্ষণের জায়গা তার উপর উপরিপাওনা দলে দলে ময়ুরের দেখা পাওয়া। এটা দেখে খুবই ভাল লাগছে।

স্থানীয় বাসিন্দা তুহিন কোনার ও সুশান্ত রায়রা জানান, আগে ময়ূরগুলি জঙ্গলের মধ্যেই থাকত। এখন মানুষের কাছাকাছি চলে আসছে। তবে আমরা স্থানীয়রা সবসময় খেয়াল রাখি। অপরিচিত কেউ এলে যাচাই করে দেখে নিই তারা চোরা শিকারী কিনা। বনবিভাগ থেকেও ময়ুরগুলির ওপর সবসময়ই নজর রাখা হয়। বনদফতরের কড়া নজরদারী ও গ্রামবাসীদের সচেতনার ফলেই এটা সম্ভবপর হয়েছে। পক্ষীপ্রেমী অনির্বাণ ব্যানার্জী জানান, আউশগ্রামের জঙ্গলে ইন্ডিয়ান উলফ বা হেঁড়োল, খরগোশ, অজগর, বনমুরগি, বনবিড়াল থেকে শুরু করে প্যাঙ্গোলিন, সজারু প্রভৃতি প্রাণীও দেখা যায়। ওইসব জীবজন্তুর সংখ্যাও এখন বেড়েছে। তবে ময়ূর এখন বাড়তি আকর্ষণ।

বর্ধমানের ডিএফও নিশা গোস্বামী বলেন, আউশগ্রামে ময়ূরের সংখ্যা আগের থেকে বেড়েছে। যদিও সঠিকভাবে গণনা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এছাড়া জঙ্গলে আগুন লাগা যাতে বন্ধ হয় তার জন্য আমরা ধারাবাহিকভাবে প্রচার চালাচ্ছি। জঙ্গলের আগুনেই ময়ূরের ডিম নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু আগুনের হাত থেকে জঙ্গলকে রোখা গেছে তাই ময়ূরের সংখ্যা বেড়েছে। জঙ্গলে অন্যান্য জীবজন্তু রক্ষা পাচ্ছে। গ্রামবাসীদের সহযোগিতা আমাদের কাছে একটা বাড়তি পাওনা। যার ফলে এই কাজ খুব সহজে করা যাচ্ছে।

প্রত্যন্ত জঙ্গলমহলে ময়ূরের টানে পর্যটকরা আসায় খুশি গ্রামবাসীরাও। প্রকৃতিকে বাঁচানোর মধ্য দিয়ে জঙ্গলমহলে হারিয়ে যাওয়া পশুপাখিদের আনাগোনায় খুশি তাঁরা। এরসঙ্গে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে সম্ভবনাময় এই এলাকায় ইকোটুরিজম গড়ে তোলার ভাবনা শুরু করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ বলে জানিয়েছেন সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে বনদফতর ও পর্যটন বিভাগের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।

Like Us On Facebook