ব্লু হোয়েলের আতঙ্ক কাটেনি এখনও। এরমধ্যেই হাজির মোবাইলের আর এক মারণ গেম ‘মোমো’। ব্লু হোয়েলের পর এবার জেলায় জেলায় মোবাইলের মারণ গেম মোমোর আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ। বাদ যাচ্ছে না পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানও। এদিন পশ্চিম বর্ধমানের লাউদোহার বাঁশগড়া এবং পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে মোমো গেম খেলার জন্য হোয়াটস অ্যাপে বার্তা এল।
দুর্গাপুরের বেনাচিতির বিবেকানন্দ হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র শেখর সিংয়ের মোবাইলে মারণ গেম মোমো খেলার তিন কড়া নির্দেশ আসায় দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া শেখর ও শেখরের পরিবার অজানা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বাধ্য হয়ে শেখরের পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়। শেখরের বাড়ি দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের লাউদোহা থানার অন্তর্গত বাঁশগড়ায়। শেখর জানায়, দিন দুয়েক আগে তার মোবাইল হঠাৎ করে হ্যাং হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। শেখর মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেছে ভেবে ফের চার্জ দেয় বলে জানায়। এরপরেই ফের মোবাইল প্রয়োজনীয় সময়ে খুললে শেখরের মোবাইলে হোয়াটস অ্যাপ মেসেজে ফোন হ্যাক করে দেবার অচেনা নম্বর থেকে হুমকি দিয়ে মোমো গেম খেলার তিনটি টাস্ক পাঠানো হয়। যার প্রথম টাস্ক হল ভূতের সিনেমা দেখতে হবে। দ্বিতীয় ট্স্ক হল হাতে ব্লেড দিয়ে মোমোর নাম লিখে ছবি তুলে তা প্রেরিত হোয়াটস অ্যাপ নম্বরে পাঠাতে হবে। আর তৃতীয় শর্ত হল আত্মহত্যা করে প্রমাণ করতে হবে। এরপরেই শেখর দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়ে। শেখরের পরিবারও চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে। শেষমেশ শেখরের পরিবার ফরিদপুর পুলিশের দ্বারস্থ হয়। অভিযোগ পেয়ে পুলিশের সাইবার সেল ঘটনার তদন্তে নেমেছে।
মোমো গেমের আতঙ্ক ছড়ালো পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে। মেমারি থানার দেশবন্ধুপল্লী এলাকার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী পার্থ বিশ্বাস নামে এক যুবককের ফোনে শনিবার হোয়াটস অ্যাপে মোমো গেম খেলার মেসেজ আসায় তীব্র আতঙ্ক ছড়ালো। যে নাম্বার থেকে ওই মেসেজ আসে তা বিদেশের নাম্বার। কিভাবে পার্থ বিশ্বাসের নাম জেনে সরাসরি তাঁর হোয়াটস্ অ্যাপে এই মেসেজ এল তা নিয়ে বিশ্বাস পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে গোটা এলাকাতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় অপর বাসিন্দা সুখেন্দু ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, শুধু পার্থ বিশ্বাসের কাছেই নয়, ইতিমধ্যেই তাঁরা খবর পেয়েছেন আরও অনেকের কাছেই এই ধরণের মেসেজ এসেছে। ফলে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গোটা বিষয়টি বুঝতে পারার পর তাঁরা সকলের কাছেই এব্যাপারে সচেতন করার চেষ্টাও করছেন।
পার্থবাবু জানিয়েছেন, শনিবার রাত্রি প্রায় সাতটা চুয়ান্ন মিনিটে আসা ওই হোয়াটস অ্যাপ মেসেজে লেখা ছিল, ‘হাই, আই অ্যাম মোমো।’ পরে আবারও রাত্রি আটটা ছ’মিনিটে আরও একটি মেসেজ আসে। যেখানে লেখা ছিল, ‘পার্থ তুমি কি মোমো চ্যালেঞ্জ খেলবে’। পরপর দু’টি মেসেজ আসার পরে পার্থবাবু ওই নম্বরটি ব্লক করে দেওয়ার পাশাপাশি গোটা ঘটনাটি তিনি প্রথমে পরিচিত এবং আত্মীয়দের জানান। তাঁদের পরামর্শেই তিনি ওই নাম্বারটি ব্লক করে দেন। তিনি জানিয়েছেন, এরপর অন্য কি ধরণের মেসেজ আসবে – তাই নিয়েই তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বিশেষত, সাম্প্রতিককালে ব্লু হোয়েল নিয়ে যেভাবে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের মোমো গেম নিয়ে একই অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। পার্থবাবু জানিয়েছেন, এব্যাপারে তিনি পুলিশ প্রশাসনকে জানাচ্ছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘জেলা পুলিশের সাইবার সেলের আধিকারিকরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন স্কুলে এই ধরণের সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে সচেতনতার প্রচার শুরু চলছে। সাধারণ মানুষকেও সচেতন করা হয়েছে, এই ধরণের বিষয় থেকে দূরে থাকার জন্য। অসুবিধা হলেই পুলিশকে জানানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।