অভিনয়ই ছিল একমাত্র নেশা। সবজি বিক্রেতার ছেলে হয়েও সেই নেশাকেই পেশা হিসেবে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলেন বছর তেত্রিশের যুবক। সেই স্বপ্ন পূরণ হলেও পেটের তাগিদে সেই স্বপ্নের বিচরণভূমিতে বেশিদিন কাটাতে পারলেন না। অতিমারির জেরে পেশা বদল করতে বাধ্য হলেন। একাধিক সিনেমা ও ধারাবাহিকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করলেও, জীবনের বাস্তব চরিত্রে এখন তিনি মাছ বিক্রেতা। মেমারির স্টেশন বাজারে প্রতিদিন সকালে মাছের খরিদ্দার সামলানোই এখন তাঁর দৈনিক কাজ। মেমারির সোমেশ্বরতলার যুবক অরিন্দম প্রামাণিকের জীবন সংগ্রাম এখন দৃষ্টান্ত এলাকার মানুষের কাছে।
গত বছর লক ডাউনের সময় টলিপাড়া ছেড়ে মেমারির বাড়িতে চলে আসেন তিনি। তখনও তিনি জানতেন না, অতিমারি এভাবে গ্রাস করবে তাঁর স্বপ্নের পেশাকে। ক্যামেরার সামনে একের পর এক চরিত্রে সাবলীল ভূমিকায় অভিনয় করলেও জীবনের রঙ্গমঞ্চে মাছ নিয়ে রাস্তার ধারে বসে বিক্রি করাটা তাঁর কাছে মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু উপায় নেই। বাবা-মা ও স্ত্রীর সংসারে টানাটানি ছিলই। বাবার ৪০ বছরের সবজির দোকানে বছর খানেক আগে থেকে খুব একটা বেচাকেনা ছিল না। তাঁর অভিনয় পেশার উপরেই ভরসা চারজনের পরিবারের। তাই বাধ্য হয়েই পৈতৃক সেই দোকানকেই মাছের দোকানে বদলে ফেলেন অরিন্দম। গত বছর লকডাউনের সময় থেকে নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে বড়ো-ছোট মাছ নিয়ে বসেন ক্রেতাদের অপেক্ষায়। কখনও হাসি মুখে অভিনয়ের দু’এক লাইন সংলাপ উপরি পাওনা ক্রেতাদের।
একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই নাট্যকার ও নির্দেশক চন্দন সেনের নাটকের দলে অভিনয়ের হাতেখড়ি হয়েছিল অরিন্দমের। ২০১১ সালে সুবর্ণলতা মেগা সিরিয়ালে ‘খোকা’ চরিত্রে তাঁর পরিচিতি বাড়িয়েছিল। ওপার বাংলার দর্শকেরাও তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তারপর একের পর এক ধারাবাহিকে তিনি অভিনয়ের দক্ষতার পরিচয় দেন। রাশি, অগ্নিপরীক্ষার মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিক এবং তোর নাম, হারাকিউলিসের মতো কয়েকটি চলচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু ও অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ভালো অভিনয়ের খ্যাতিতে নিয়মিত কাজের পরিসর বাড়তে থাকে। এমন সময় করোনার প্রকোপ ও লকডাউন জীবনের গতিপথ পাল্টে এখন রাস্তার ধারে ১৫ ফুট বাই ২০ ফুটের দোকানে রুই, কাতলা, ইলিশ ও চিংড়ি বিক্রি করেন তিনি।
অরিন্দমবাবু বলেন, প্রথম পর্বের লকডাউনের পর যখন অর্ধেক ইউনিট নিয়ে টলিপাড়ায় কাজ শুরু হয়, তখন ফের অভিনয়ের ডাক এসেছিল। কিন্তু ভরসা করতে পারিনি। কারণ গত এক বছরে ধীরে ধীরে মাছের ব্যবসাটা গুছিয়ে নিয়েছি। পরিবারের এটাই একমাত্র আয়ের উৎস। তাই এটা ছেড়ে স্বপ্নের পেশায় যাওয়ার ঝুঁকিটা নিতে পারিনি। তাই আপাতত আমার পেশা মাছের আড়তে মাছ বিক্রি করা।