প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বনসৃজন, বনমহোৎসব হয় রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু ৩০ বছরে পাঁচ লাখ গাছ পুঁতে মানুষের কল্যাণে সবুজ সৃষ্টি করেও পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার আলিনগরের গাছ পাগল রাধেশ্যাম গড়াই কোন সরকারি স্বীকৃতি পেলেন না। বন দফতরের বহু চেষ্টা সত্বেও মানুষের মধ্যে এখনও যখন বনসৃজন নিয়ে সচেতনতার অভাব স্পষ্ট, তখন রাধেশ্যাম সম্পূর্ণ নিজের আন্তরিক চেষ্টায় গ্রামের পথ চলতি মানুষজনকে একটু ছায়া দিতে আস্ত একটা বনাঞ্চল তৈরি করে চমকে দিয়েছেন সকলকে।

রানিগঞ্জের পাঞ্জাবি মোড় থেকে জাতীয় সড়ক ধরে সিউড়ির দিকে এগিয়ে গেলে চিচুড়িয়া পঞ্চায়েত কার্যালয়। তারপরেই আলিনগর গ্রাম। এই গ্রামের প্রবেশ পথে রাস্তার দুধারে ইউক্যালিপ্টাসের বন। আর এই বন তিরিশ বছর ধরে একটি একটি করে প্রায় পাঁচ লাখ ইউক্যালিপ্টাসের চারা রোপণ করে প্রায় দুশো একর পতিত জমিতে বনাঞ্চল তৈরি করেছেন আলিনগরের গাছ পাগল রাধেশ্যাম গড়াই। নিছক সখের বসে নয়, গ্রামের বাসিন্দাদের চলার পথে প্রখর সূর্যতাপ থেকে রক্ষা করতে গ্রামবাসীদের পতিত জমিতে সবুজায়ন করেছেন গাছ পাগল রাধেশ্যাম।

বর্ষার মরসুমে চারা গাছ রোপণ করে সারা বছর তা প্রতিপালন করেন রাধেশ্যাম। গাছই রাধেশ্যামের ধ্যান জ্ঞান। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সকল মরসুমে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত নিজের হাতে রোপণ করা গাছগুলোকে বুক দিয়ে আগলে রেখে গ্রামের পতিত জমিতে সবুজায়ন ঘটিয়েছেন রাধেশ্যাম। সংসার সামলে রাধেশ্যামের স্ত্রী ভারতী এবং দুই ছেলে ও মেয়েরাও বরাবরই সাহায্য করেছেন বনসৃজনে। বর্তমানে সত্তরোর্ধ্ব রাধেশ্যামকে গাছ প্রতিপালনে সাহায্য করেন তাঁর দুই ছেলে সুকুমার ও সাধন। ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু করে প্রায় পাঁচ লাখ চারা গাছ রোপণ করে দুশো একর জমি আজ গভীর বনাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। রাধেশ্যাম গড়াই বলেন, ‘জীবনের অর্ধেকটা সময় বনাঞ্চল তৈরিতে ব্যয় করেছি। নিজের কোন সখ-আহ্লাদ বলে কিছু নেই।’ সরকারি স্বীকৃতি বলতে বন‌দফতরের আধিকারিকরা একবার বনসৃজন দেখে খুশি হয়ে তাঁকে একটা গামছা আর লুঙ্গি দিয়েছিলেন বলে জানান রাধেশ্যাম। তাছাড়া কোন স্বীকৃতি বা উৎসাহ কোনটাই জোটেনি রাধেশ্যামের কপালে। আলিগনরের অনেকেই বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় রাধেশ্যাম আমাদের মডেল। সারাক্ষণ নিজের তৈরি বনেই পড়ে থাকেন। বনই তাঁর ভালবাসা। তাঁর ঠিকানা।’



Like Us On Facebook