হস্টেলের প্রধান পাচকের স্মৃতিতে তাঁর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করলেন বর্ধমানের মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজের নিউ ইঞ্জিনিয়ারিং বয়েজ হস্টেলের ছাত্ররা। বর্তমান ও প্রাক্তনীরা মিলে এই কাজে হাত লাগিয়েছেন। নজীরবিহীন এই মানবতার ঘটনায় রীতিমত বর্ধমান শহর জুড়ে চর্চা শুরু হয়েছে। রবিবার এই মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। একবছর আগে এই কলেজের চিফ অফ ডাইনিং ফকির চন্দ্র চক্রবর্তী ৮৬ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে পরলোক গমন করেন। তিনি ছিলেন মহারাজাধিরাজ বিজয় চাঁদ ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজের হস্টেল বিভাগের মুখ্যপাচক। কিন্তু হস্টেলের সামান্য পাচক হলেও তিনি কলেজের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী, কর্মী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, এমনকি প্রাক্তন পড়ুয়াদের অতিপ্রিয় মনের মানুষ ছিলেন। সকলের কাছে তিনি ছিলেন ‘ঠাকুরদা’ নামে পরিচিত।
প্রাক্তন ছাত্র শ্যামল সাউ জানিয়েছেন, প্রায় ৫৭ বছর একটানা কলেজ হস্টেলে কর্মরত ছিলেন ঠাকুরদা। সকল ছাত্রের এত প্রিয় ছিলেন যে, কোন পড়ুয়া কলেজ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এমনকি বিদেশ বা ভিন রাজ্যে কর্মরত প্রাক্তনীরা কোন কারণে বর্ধমান বা আশেপাশে যে কাজেই থাক, একটি বারের জন্য দেখা করে যেতেন ঠাকুরদার সঙ্গে। ঠাকুরদার পরলোকগমন বয়স জনিত কারণে হলেও তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা। তাই রবিবার কলেজ হস্টেল সংলগ্ন ময়দানে তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। শ্রদ্ধা ও স্মরণে একত্রিত হয়ে প্রাক্তন ছাত্র ও বর্তমান ছাত্ররা এই উপলক্ষে তাঁদের সম্মিলিত প্রয়াস ও পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদের প্রিয় ‘ঠাকুরদা’র আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করেন এদিন। শ্যামল সাউ জানিয়েছেন, তাঁদের প্রিয় ঠাকুরদা সারাটা জীবন যেভাবে হস্টেলের কার্যত অভিভাবক থেকেছেন, দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ পরিবার থেকে আসা, বাবা-মাকে ছেড়ে আসা কমবয়সী ছাত্রদের মাথায় ছাতা ধরেছেন। তাই ঠাকুরদার এই পরম স্নেহ, মমতাকে স্মরণীয় করে রাখতেই তাঁর আবক্ষ মূর্তি বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই ছাত্র-ছাত্রীরা আনন্দিত, গর্বিতও তাঁদের ঠাকুরদাকে স্মরণীয় করে রাখতে পেরে।