মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে পূর্ব বর্ধমানের ২নং ব্লকের ৪টি গ্রামে বর্ষার চাষ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল সিপিএমের ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। বুধবার সকালে ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে এই চাষ বন্ধ করার ঘটনায় ক্ষিপ্ত এলাকার চাষিরা বুধবার সকাল থেকে বর্ধমান-কালনা রোড প্রায় ৮ ঘন্টা অবরোধ করেন। এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় মেমারি থানার পুলিশ, বর্ধমান জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলাশাসক বাসব বন্দোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ গার্গী নাহা, বর্ধমান ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অম্বিকা যশ, তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি শ্যামল দত্ত প্রমুখরাও। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। অবরোধের জেরে ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ ও নিত্যযাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন।
এলাকার চাষি পতিতপাবন সাঁই, নীলরতন সাঁই প্রমুখরা অভিযোগ করেছেন, সিপিএমের কৃষকসভার ডাকে নবস্থা গ্রাম পঞ্চায়েতের আউশা, বেগুট, বুদপুর প্রভৃতি এলাকায় মজুরি বৃদ্ধির ডাক দেওয়া হয়েছে। কৃষকসভার দাবি ১৭০ টাকা নগদ ও ২ কেজি চাল দিতে হবে, অন্যথায় কোনো শ্রমিককেই কাজ করতে দেওয়া হবে না। চাষিরা জানিয়েছেন, এই অবস্থায় গোটা এলাকারপ্রায় ১৬ হাজার বিঘে খরিফ চাষ রোয়ার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এব্যাপারে তাঁরা বারবার স্থানীয় বিধায়ক থেকে প্রশাসনের সমস্ত স্তরে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই এদিন চাষিরা রাস্তা অবরোধ করেছেন। অবরোধকারীরা এদিন দাবি করেছেন যারা ক্ষেতমজুরদের বিভ্রান্ত করে এই চাষ বন্ধ রেখে চাষিদের ক্ষতি করছে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। কার্যত ক্ষুব্ধ চাষিদের সঙ্গে এদিন দফায় দফায় বৈঠক করেন প্রশাসনের কর্তারা। পরে অবরোধ ওঠে।
অন্যদিকে, এব্যাপারে সিপিএমের ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক গণেশ চৌধুরী জানিয়েছেন, গত ২২ জুলাই থেকে গোটা রাজ্যের পাশাপাশি বর্ধমান জেলাতেও ক্ষেতমজুরদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই পূর্ব বর্ধমান জেলার বহু অঞ্চলেই ১৫০ টাকা নগদ ও ২ কেজি চালের দাবি মেনে নিয়েছেন কৃষকরা। সেই সমস্ত জায়গায় ধান রোয়ার কাজ শেষও হয়ে গেছে। তিনি জানিয়েছেন, নবস্থা অঞ্চলেও তাঁদের এই আন্দোলন চলছে। সেখানকার কিছু চাষি এখনও এই দাবি না মানলেও কেউ কেউ মেনে নিতে চেয়েছেন। গণেশবাবু জানিয়েছেন, সরকার নির্ধারিত মজুরির তুলনায় তাঁরা আলোচনা করে অনেকটাই নগদ মজুরির পরিমাণ কম দাবি করেছেন। কারণ বর্তমান সময়ে এই অর্থ ছাড়া কোনো ভাবেই একটি পরিবারের চলা সম্ভব নয়। তাঁরাও চান আলোচনা করেই সমস্যার সমাধান। কিন্তু নবস্থা অঞ্চলের কিছু চাষি এখনও অনড় মনোভাব দেখানোয় সেখানে আন্দোলন চলছে।