নবদ্বীপের মায়াপুরে গিয়ে বর্ধমানের একই পরিবারের চারজনের আত্মহত্যার চেষ্টায় শহর জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়াল। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে বর্ধমান শহরের নতুনগঞ্জ বাজার এলাকার দীর্ঘদিনের ডিমের পাইকারী ব্যবসায়ী নাগ পরিবার। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে তাঁদের প্রচুর দেনা হয়। এলাকার বাসিন্দাদের কারও কারও দাবি এই দেনার অংক প্রায় ৮০ লাখ টাকার কাছাকাছি। কিন্তু কেন এই বিশাল পরিমাণ আর্থিক ঋণ? প্রতিবেশীরাই দাবি করছেন, নমিতা দেবীর বড় ছেলে হরিদাস নাগ, মেজ ছেলে দেবদাস নাগ এবং ছোট ছেলে সৌমেন নাগ সম্প্রতি আইপিএলে প্রচুর টাকা ঢেলে ফেলে লোকসানের মুখে পড়েন। এরপর থেকেই তাঁরা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। গত কয়েকদিন ধরে তাঁদের ব্যবসা ক্ষেত্রও বন্ধ ছিল। নতুনগঞ্জ এলাকার কিছু ব্যবসায়ী সহ সাধারণ মানুষের দাবি, বাজারে পরিচিত কাউকে দেখলেই আইপিএল সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে দেখেছেন তাঁরা। আর সেই সূত্র ধরেই তাঁদের ধারণা আইপিএলের বেটিং-এ সম্ভবত টাকা ঢেলেই মুশকিলে পড়েন নাগ পরিবার।

এদিকে, সোমবার ভোরে মায়াপুর ঘুরতে যাওয়ার নাম করে নমিতা নাগ সহ তিন ছেলেই রওনা হন। বর্ধমানের বাড়িতে ছিলেন হরিদাস নাগের স্ত্রী ঝুমা নাগ ও তাঁদের কন্যা সন্তান এবং মেজ ছেলের স্ত্রী কেয়া নাগ ও তাঁর শিশু পুত্র। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে সোমবার সকালে তাঁরা বেড়িয়ে যাওয়ার পর ওইদিন রাত থেকে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। এমনকি মঙ্গলবার সকাল থেকে তাঁরা বারবার হরিদাসবাবুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বিফল হন। এরপর মঙ্গলবার রাত্রি প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ হরিদাসবাবুই তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে জানান, তাঁরা মায়াপুরের নিউ মায়াপুর হোটেলে আছেন এবং তাঁরা সকলেই বিষ খেয়েছেন। কার্যত এই ফোন পেয়েই রীতিমত গোটা পরিবারেও অন্ধকার নেমে আসে। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশী এবং আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। একইসঙ্গে ১৯ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার সাহাবুদ্দিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মূলত, সাহাবুদ্দিনবাবুই দ্রুততার সঙ্গে গোটা বিষয়টি জানান বর্ধমান থানাকে। বর্ধমান থানা থেকে আবার তা জানানো হয় নবদ্বীপ থানাকে। নবদ্বীপ থানা দ্রুততার সঙ্গে মঙ্গলবার রাতেই হোটেল থেকে ৪ জনকে উদ্ধার করে নবদ্বীপ জেলা হাসপাতাল তথা শক্তিনগর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বুধবার সকাল থেকেই নাগ পরিবারের সদস্যরা সুস্থতার দিকে ফিরতে শুরু করেন। নমিতাদেবী জানান, বাজারে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ হওয়ার কারণেই ছেলেরা আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। তবে তিনি এই বিষয়টি জানতেনই না। এমনকি তাঁকে যে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল তাও তিনি জানতেন না।

এদিকে, বর্ধমানের এই নাগ পরিবারের এই আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা বর্ধমান শহর জুড়েই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এদিন পরিবারের পক্ষ থেকে আইপিএলে টাকা ঢালার বিষয়টি স্বীকার করা না হলেও ব্যবসায়ীক কারণেই প্রচুর টাকা ঋণ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। এই ঋণের টাকা মেটাতে তাই পাওনাদারদের চাপও ছিল বলে পরিবার সূত্রে স্বীকার করা হয়েছে।