বিগত কিছুদিন ধরে কাঁকসার শিবপুরে গজিয়ে উঠেছে লুপ্তপ্রায় পতঙ্গভুক উদ্ভিদ সূর্যশিশির। আর এই লুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ দেখতে কাঁকসার শিবপুর গ্রামে মানুষের ঢল নামছে প্রতিদিন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এলাকার একটি পতিত জমিতে এই উদ্ভিদের দেখা মিলছে। এই বিষয়ে তাঁরা ব্লক প্রশাসনকেও জানিয়েছেন। বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য গিরিধারী সিনহা জানিয়েছেন, তাঁরা খবর পেয়ে দেখেন বেশ কিছু সূর্যশিশির উদ্ভিদ জন্মেছে।
সূর্যশিশিরের ইংরেজি নাম ‘Sundew’ বা Drosera। এর পাতা দেখতে ফুলের মতো ছোট ও গোলাকার। পাতাগুলো উজ্জ্বল লাল রঙের। সূর্যশিশিরের পাতায় শিশিরবিন্দুর মতো চকচকে করে আঠা। এই চকচক করা আঠালো রসই হচ্ছে উদ্ভিদটির পতঙ্গ ধরার ফাঁদ। এই চকচকে পাতা দেখে কীটপতঙ্গ আকৃষ্ট হয়। উদ্ভিদটি বাতাসে সুগন্ধও ছড়ায় বলে জানা গেছে। সূর্যশিশিরের সুগন্ধ আর চকচকে আঠালো রসে আকৃষ্ট হয়ে যখনই কোন পতঙ্গ এর উপরে বসে তখনই আঠালো রসে আটকে যায়। কীটপতঙ্গ যতই নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায় উদ্ভিদটির কর্ষিকাগুলি বেঁকে গিয়ে আরও বেশি পরিমাণে আঠালো রস নিঃসৃত করতে থাকে। তখন আরও শক্তভাবে পাতায় আটকে যায় কীট-পতঙ্গ। এরপর পাতাটি কুঁচকে গিয়ে আটকে যাওয়া পতঙ্গের চারপাশে একটি পেয়ালার মতো আকার সৃষ্টি করে। পোকাটির দেহের নরম অংশগুলো গলে পাতায় মিশে না যাওয়া পর্যন্ত এই উদ্ভিদের পরিপাকে সাহায্যকারী এনজাইমগুলো কাজ করে। চার-পাঁচ দিন পরে সূর্যশিশিরের পাতা ও বোঁটাগুলো আবার আগের মতো সোজা হয়ে যায়।
এই বিষয়ে বুদবুদের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের আধিকারিক সুব্রত সরকার জানিয়েছেন, সচরাচর এই ধরণের উদ্ভিদ উত্তরবঙ্গেই দেখা যায়। যে পরিমাণে এ বছর বৃষ্টিপাত হয়েছে সেই কারণে কোন ভাবে সূর্যশিশির উদ্ভিদ শিবপুরে চলে এসেছে। উত্তরবঙ্গের আবহাওয়াতেই এই উদ্ভিদের দেখা মেলে বলে জানান তিনি। সুব্রতবাবু বলেন, ‘এই উদ্ভিদ সরাসরি পতঙ্গভুক অর্থাৎ এই উদ্ভিদ সব ধরণের পতঙ্গ গ্রাস করে ফেলে। এই উদ্ভিদ যতদিন থাকবে ততদিন ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে, কারণ তারা স্বচক্ষে এই উদ্ভিদ দেখতে পারবে। এই উদ্ভিদ থেকে ভেষজ ঔষধ তৈরি হয় যা মানুষের অনেক উপকারেও লাগে।’