প্রায় চার ঘন্টা রেল দফতরের সঙ্গে টানাপোড়েনের পর অবশেষে রবিবার বিকেলে মীনা দেবী ও মনীষা কুমারীর কফিন বন্দি নিথর মৃতদেহ দুটি দুর্গাপুরের রাঁচি কলোনির বাড়িতে ফিরল। রবিবার দুপুর ১ টা নাগাদ অজমেঢ়-শিয়ালদা এক্সপ্রেসের লাগেজ বগিতে একটি কফিনেই দুটি মৃতদেহ দুর্গাপুর রেলস্টেশনে আসে।মীনা দেবী ও মনীষা কুমারীর পরিবারের লোকজন ছাড়াও শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের অনেকেই শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এদিন দুর্গাপুর রেলস্টেশনে আসেন।

কিন্ত অজমেঢ়-শিয়ালদা ট্রেনের লাগেজ বগিতে মীনা দেবী ও মনীষা কুমারীর মৃতদেহ দুটি আলাদা আলাদা কফিনের পরিবর্তে একটি কফিনের মধ্যে বন্দি অবস্থায় দেখে এবং ডেথ সার্টিফিকেট সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে না দেওয়ায় ভারতীয় রেল দফতরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মীনা দেবী ও মনীষা কুমারীর পরিবারের লোকজন সহ শিল্পাঞ্চলের মানুষ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন দুর্গাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার এনকে দাস সহ রেল পুলিশের কর্মকর্তারা। পরে কফিন বন্দি মা ও মেয়ের মৃতদেহ দুটি নিয়ে দুর্গাপুর রেলস্টেশনে দীর্ঘক্ষণ ধরে ডেথ সার্টিফিকেট সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সঙ্গে মীনা দেবী ও মনীষা কুমারীর পরিবারের লোকজন মা ও মেয়ের মৃত্যুকে রেল যাত্রায় নিরাপত্তার গাফিলতির অভাবে মৃত্যু বলে দাবি করে পরিবারের একজনকে রেলে চাকরি দেওয়ার দাবি করা হয়।

দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ অগস্থি, দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল মীনা দেবী ও মনীষা কুমারীর ডেথ সার্টিফিকেট সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসেন। শেষে রবিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ রেল দফতর থেকে মীনা দেবী ও মনীষা কুমারীর ডেথ সার্টিফিকেট সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রাপ্তির ও মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস পেলে মীনা দেবী ও মনীষা কুমারীর নিথর মৃতদেহ দুটি রাঁচি কলোনির বাড়িতে ফেরে। রবিবার সকাল থেকেই রাঁচি কলোনির বাড়িতে অগণিত মানুষ মীনা দেবী ও মনীষা কুমারীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর থেকে রাজস্থানের কোটায় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোচিং সেন্টারে ভর্তির উদ্দেশ্যে দুর্গাপুরের রাঁচি কলোনির বাসিন্দা মা, মীনা দেবী ও মেয়ে, মনীষা কুমারী পূর্বা এক্সপ্রেসে রওনা হন। শুক্রবার দিল্লি পৌঁছে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ফের শুক্রবার রাতে দিল্লি থেকে কোটার উদ্দেশ্য নিজামুদ্দিন-তিরুবনন্তপুরম সেন্ট্রাল সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসে উঠেন। ট্রেন মধ্যরাতে উত্তর প্রদেশের বৃন্দাবন স্টেশনে পৌঁছালে মীনা দেবী ও মনীষা কুমারীর বগিতে ছিনতাইবাজরা হানা দেয়। সেই সময় ঘুম থেকে উঠে টয়লেট যেতে গেলে মীনা দেবীদের ব্যাগ ছিনতাই করে পালাতে গেলে ওই ব্যাগে মেয়ে মনীষার প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট থাকায় মীনা দেবী দুষ্কৃতিদের পথ আটকান। এরপরেই বিপদ বুঝে ছিনতাইবাজরা মীনা দেবীকে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। মাকে বাঁচাতে গেলে মেয়ে মনীষাকেও দুষ্কৃতিরা একই ভাবে চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে রেল লাইনে ফেলে দিলে দুজনেরই মৃত্যু হয়।

Like Us On Facebook