রথযাত্রা এবং আগামী ২৪ ডিসেম্বর দুর্গাপুরে নরেন্দ্র মোদির সভা ঘিরে বিজেপির সাংগঠনিক প্রস্তুতি বিষয়ে মিটিং সেরে বাড়ি ফেরার পথে কাঁকসার মলানদিঘির সরস্বতীগঞ্জের জঙ্গলে বিজেপির বুথ কমিটির সভাপতিকে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। অপর এক বিজেপি কর্মী গুরুতর আহত হন। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায় রবিবার রাত থেকে।
জানা গেছে, কাঁকসার মলানদিঘির সরস্বতীগঞ্জে রবিবার রাতে বিজেপির রথযাত্রা নিয়ে বুথ কমিটির বৈঠক ছিল। বৈঠক শেষে কাঁকসার মলানদিঘির রূপগঞ্জের বুথ কমিটির সভাপতি সন্দীপ ঘোষ (২৩) ও এক বিজেপি কর্মী জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বাইকে করে বাড়ি ফেরার সময় জনা বিশ দুষ্কৃতী রড-লাঠি দিয়ে সন্দীপ ঘোষ ও জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথ আটকে ব্যাপক মারধর করে।
কোনক্রমে সন্দীপ ঘোষ ও জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাণ বাঁচাতে পালাতে গেলে দুষ্কৃতীরা দুই বিজেপি কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে সন্দীপ ঘোষের মাথায় গুলি লাগে। ঘটনাস্থলেই সন্দীপ ঘোষ লুটিয়ে পড়েন। খবর পেয়ে বিজেপি কর্মীরা এসে আহত জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৃত সন্দীপ ঘোষকে উদ্ধার করে। আহত জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে দুর্গাপুরের ডিসিপি অভিষেক মোদীর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় পৌঁছায়। ডিসিপির নেতৃত্বে সোমবার সকালে রুট মার্চ করা হয়। গোটা এলাকা থমথমে।
জানা গেছে, মৃত সন্দীপ ঘোষ দুর্গাপুরের মাইকেল মধুসূদন মেমোরিয়াল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং মলানদিঘির লুথফা আইটিআই কলেজের ছাত্র ছিলেন। বিজেপির পশ্চিম বর্ধমান জেলার সভাপতি লক্ষণ ঘড়ুই সন্দীপ ঘোষের মৃত্যুর পিছনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সরাসরি হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। লক্ষণ ঘড়ুই বলেন, ‘বিজেপি রথযাত্রা নিয়ে গতকাল রাতে কাঁকসায় বুথ কমিটির মিটিং ছিল। সন্দীপ ঘোষ এলাকার বুথ কমিটির সভাপতি ছিল। সন্দীপ কলেজের ছাত্র ছিল।’ লক্ষণ ঘড়ুইয়ের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেসের কয়লা চোর, বালি চোররা বিজেপিকে ভয় পাচ্ছে। বিজেপি এসে গেলে সব চুরি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সন্দীপ ঘোষের মতো তরতাজা যুবককে গুলি করে হত্যা করল তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা।
এদিকে বিজেপির পশ্চিম বর্ধমান জেলার সভাপতির অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলার কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখার্জি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘এটা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের। দিল্লি থেকে যে টাকা আসছে সেই টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে খুন হয়েছে বিজেপির সন্দীপ ঘোষ। এই খুনের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোন সম্পর্ক নেই।’
সন্দীপ ঘোষের বাবা বিজয় ঘোষ ছেলেকে হারিয়ে বলেন, ‘সন্দীপকে পড়াশোনা শিখিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে চেয়েছিলাম। কিন্ত ছেলে শেষমেশ রাজনীতির শিকার হয়ে গেল।’