দুর্গাপুরের সেপকো টাউনশিপের বাসিন্দা অনুরাধা গুপ্তা

মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা বিনিয়োগ করার নামে প্রতারণার শিকার দুর্গাপুরের এক মহিলা। অভিযুক্ত পলাতক। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আনলেন প্রতারিত মহিলা। অভিযুক্তকে খোঁজার চেষ্টা চলছে বলে জানালো পুলিশ।

জানা গেছে, স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাড়িতেই টেলারিংয়ের দোকান খোলেন দুর্গাপুরের সেপকো টাউনশিপের বাসিন্দা অনুরাধা গুপ্তা। পারিবারিক বন্ধুর সূত্র ধরে অনুরাধাদেবীর সাথে পরিচয় হয় দুর্গাপুর থানার অন্তর্গত ৫৪ ফুটের শ্রীনগরপল্লীর বাসিন্দা চন্দন ঘোষের। নিজেকে এক নামী বেসরকারি ব্যাংকের মিউচুয়াল ফান্ড বিভাগের আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে চন্দন ঘোষ অনুরাধা গুপ্তাকে ব্যাংকের লাভজনক স্কিমে বিনিয়োগ করার টোপ দেন বলে অভিযোগ।

অনুরাধাদেবী বলেন, ‘২০১৯ সালের শেষ দিকে আমাকে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাবে আশ্বাস দিয়ে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার নাম করে টাকা নেন চন্দন ঘোষ। এই টাকা বিনিয়োগ করার পর মাস কয়েক ভালোই রিটার্ন পেয়েছিলাম। কিন্তু বেশ কয়েক মাস ঠিকঠাক রিটার্ন পাওয়ার পর কিছু একটা জটিলতা তৈরি হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণেই অসুবিধে হচ্ছে এই কথা ভেবে চুপচাপ ছিলাম। কিন্তু মাস ছয়েক পর চন্দন ঘোষ আমাকে বোঝান, আরও একটি নতুন স্কিম এসেছে, এই স্কিমে টাকা রাখলে আগের বিনিয়োগের থেকে দ্বিগুণ রিটার্ন মিলবে। আমাকে বলেন আগের বিনিয়োগের ৬ লক্ষ টাকা তুলে নিয়ে, নতুন করে আরও ৬ লক্ষ টাকা জুড়ে মোট ১২লক্ষ টাকা বিনিয়োগের জন্য। স্রেফ বিশ্বাসের ভরসায় পুরোনো বিনিয়োগের ৬ লক্ষ টাকা তুলে নিয়ে ভালো রিটার্ন পাওয়ার আশায় নতুন করে আরও ৬ লক্ষ জুড়ে মোট ১২ লক্ষ টাকা চন্দন ঘোষের প্রস্তাব মাফিক নতুন স্কিমে রাখার সিদ্ধান্ত নিই। সই মতো চেক স্বাক্ষর করে দিই চন্দন ঘোষকে। কিন্তু চেকের টাকার অঙ্ক আমি লিখে দিলেও, বাকি তথ্য নিজে লিখে জমা করে দেবেন ব্যাংকের নতুন স্কিমে এই কথা বলে চেক নিয়ে চলে যান চন্দনবাবু।’

অভিযোগ, রিটার্ন পাওয়া তো দূর অস্ত, এরপর থেকেই বেপাত্তা হয়ে যান চন্দন ঘোষ, আর ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে অনুরাধা গুপ্তা জানতে পারেন, সব টাকাটাই চন্দন ঘোষ নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে নিয়েছেন। অর্থাৎ ১২ লক্ষ টাকা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের নামে সবটাই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে যান অনুরাধাদেবী। বিষয়টি জানতে পেরে দুর্গাপুর আদালতের দ্বারস্থ হন অনুরাধা গুপ্তা। অভিযুক্ত চন্দন ঘোষ সহ মা রমা ঘোষ, বাবা অজিত ঘোষের নামেও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে দুর্গাপুর আদালতে।

অভিযুক্ত চন্দন ঘোষের বাবা অজিত ঘোষ বলেন, ছেলের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, এখন ছেলে কিছু করে থাকলে সেটা ছেলে বুঝবে আর পুলিশ প্রশাসন বুঝবে। যদিও তদন্তের আশ্বাস দিয়ে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের এসিপি (দুর্গাপুর জোন) ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পুলিশ নিজের মতো করে তদন্ত করছে, কোনোভাবেই অপরাধী ছাড় পাবে না। কিন্তু পুলিশের এই আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না অনুরাধা গুপ্তা। তিনি বলেম, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর এটাই তার পুঁজি ছিল, এখন এই ১২ লক্ষ টাকা খুইয়ে অনিশ্চিত এক ভবিষতের পথে আমার পরিবার।’

Like Us On Facebook