সাত সকালে বর্ধমান-হুগলির বর্ডার এলাকার পাণ্ডুয়ায় গুলি করে গাড়ি চালককে খুন করে গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা দুষ্কৃতিদের। মৃত গাড়ি চালকের নাম উদয়ন বিশ্বাস ওরফে বিকাশ বিশ্বাস (৫২)। বাড়ি বর্ধমানের নাড়ি খাঁপুকুর পূর্ব পাড়া এলাকায়। মৃতের স্ত্রী তপস্যা বিশ্বাস জানিয়েছেন, অন্যান্যদিন ভোরবেলাতেই উদয়নবাবু গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যান বর্ধমান স্টেশনে। আজ একটু দেরী করেই বেড়িয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, সোমবার রাতেই কেউ একজন ফোন করে গাড়ি ভাড়ার জন্য বলেছিল। সেজন্যই দেরী করে বের হন। তিনি জানিয়েছেন, এদিন সকাল প্রায় ৬টা নাগাদ তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। তপস্যাদেবী জানিয়েছেন, তিনি অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। যথারীতি উদয়নবাবু বেড়িয়ে যাওয়ার পর তিনিও বেড়িয়ে যান। প্রায় ৯টা নাগাদ পাড়ারই একটি ছেলে তাঁকে ফোন করে জানায়, পাণ্ডুয়াতে কিছু একটা ঘটেছে এখনই পাণ্ডুয়া যেতে হবে। তপস্যাদেবী জানিয়েছেন, এরপর তিনি পাড়ার ওই ছেলেটিকে বারবার জিজ্ঞাসা করায় সে এই দুঃসংবাদটি জানায়। কেন এবং কি কারণে এই ঘটনা ঘটল কিছুই তিনি বুঝতে পারছেন না। এই ঘটনার বিষয়ে তিনি উপযুক্ত তদন্ত চাইছেন। তপস্যাদেবী জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর সঙ্গে কারও কোন শত্রুতা ছিল না। তা সত্ত্বেও কেন এই ঘটনা ঘটল তা তিনি জানেন না।
মৃত উদয়নবাবুর ছেলে রকি বিশ্বাস জানিয়েছেন, উদয়নবাবু যে স্করপিও গাড়িটি চালান, সেটি লকডাউনের সময় গাড়ির মালিক তাঁকে বেচে দেন। রকি জানিয়েছেন, ওই গাড়িটি দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর বাবা চালাচ্ছিলেন। বর্ধমান স্টেশনের গাড়ি চালক শিবনাথ মিশ্রা, সেখ নূরহাসান আলি প্রমুখরা জানিয়েছেন, এদিন সকালে বর্ধমান স্টেশনের গাড়ি স্ট্যান্ডে আসে ৩-৪ জন। গাড়ি ভাড়া লাগবে বলে জানায়। নির্দিষ্টভাবে স্করপিও গাড়ি লাগবে বলে জানিয়ে সেই স্ট্যান্ডে গাড়ি না পেয়ে পাশের স্ট্যান্ডে উদয়ন বিশ্বাসের সাথে কথা বলেন তাঁরা। ব্যান্ডেল যাব বলে ৩৩০০ টাকা ভাড়া করে বের হন তাঁরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এই ঘটনার পর তাঁদের প্রাথমিক অনুমান কোন রকমের দুষ্কর্ম করার উদ্দেশ্যে কিংবা গাড়ি ছিনতাই করার পরিকল্পনা করেই দুষ্কৃতীরা গাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। সম্ভবত, তাতে বাধা পেয়েই খুন বলে তাঁদের অনুমান। দুষ্কৃতীরা হিন্দি ও ভোজপুরী ভাষায় কথা বলছিলেন বলে নূরহাসান আলিরা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, যে ব্যক্তিরা গাড়ি ভাড়ার জন্য এসেছিলেন তাঁদের চেহারা তাঁদের কাছে সন্দেহজনক ঠেকেছিল। প্রত্যেকের পিঠেই একটি করে কালো ব্যাগ ছিল। এই ঘটনার পর রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গাড়ি চালকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, গাড়ি ভাড়া করতে অনেকেই আসেন। তাঁরা ভাড়া ঠিক করে নিয়েও যান, কিন্তু এই ঘটনায় তাঁদের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
অন্যদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমান থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যাণ্ডেলের পথে যাওয়ার সময় পুরনো জিটিরোড বরাবর যেতে থাকেন দুষ্কৃতিরা। বর্ধমান-হুগলির সীমানার কাছে উদয়নবাবুকে মাথায় ও পাঁজরে গুলি করে খুন করার পর তাঁকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালাতে থাকেন দুষ্কৃতিরা। এই সময় স্থানীয় মানুষের তৎপরতায় তাঁদের পিছু ধাওয়া করে পুলিশ গাড়ি সহ একজন দুষ্কৃতিকে ধরতে পারলেও বাকি ৩জন পালিয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃত ব্যক্তির নাম বিশাল সিং। বাড়ি বিহারের আড়া জেলায়। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পাণ্ডুয়া থানার পুলিশ।