লড়াইটা ছিল কঠিন। তবে কোনদিন তিনি হার মানেননি। স্বামী নিরুদ্দেশ, তার উপর মারা গেলেন বাবা, এরপরই সংসারের হাল ধরতে চায়ের সসপ্যান ধরেন কাঁকসার সিংপাড়ার বাসিন্দা শিবানী গোস্বামী। দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৫৫ টি বছর। চা বিক্রি করেই সংসারের হাল ধরেছেন শিবানীদেবী। কাঁকসার রথতলায় ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। ভোর থেকেই সেখানে চা খেতে ভিড় জমান এলাকার মানুষ। কোলে যখন ৬ মাসের একমাত্র সন্তান, হঠাৎ করেই নিরুদ্দেশ হয়ে যান তাঁর স্বামী। বহু খোঁজাখুঁজির পরেও তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর মারা যান শিবানীদেবীর বাবা।
সংসারের হাল ধরতে অবশেষে বাবার দোকানে গিয়ে চায়ের সসপ্যান ধরেন শিবানীদেবী। এরপর ছেলেকে মানুষ করা, তাকে বড় করে তোলা, তার বিয়ে দেওয়া সবই হয়েছে সেই চায়ের দোকান থেকেই। বর্তমানে ছেলে-বউ-নাতি-নাতনি নিয়ে তার ভরা সংসার। তবুও গত ৫৫ বছর ধরে একইভাবে নিয়ম করে তিনি সকালে দোকানে আসেন এবং রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যান। দেখতে দেখতে বয়স তার প্রায় সত্তর ছুঁইছুঁই। তবু আজও জীবন যুদ্ধে হার মানতে চান না তিনি। গত ৫৫ বছর ধরে সাহায্যের হাত কেউ বাড়িয়ে না দিলেও, কিংবা কেউ পাশে না দাঁড়ালেও গত কয়েক মাস হল তিনি বৃদ্ধ ভাতা পেতে শুরু করেছেন।
এলাকার মানুষ বলেন, শিবানীদেবীর লড়াই করে বেঁচে থাকাটা অন্যদের কাছে একটা উদাহরণ। পড়াশোনার গণ্ডি পেরিয়ে মায়ের কাজে হাত লাগান তাঁর ছেলে রামকৃষ্ণ গোস্বামী। গত কয়েক বছর ধরে মাকে সাহায্য করে আসছেন তাঁর একমাত্র ছেলে। ছেলে রামকৃষ্ণ বলেন, ‘মার বয়স হয়েছে, তবে তাঁর যতদিন ইচ্ছা তিনি দোকানে এসে দোকান সামলাবেন। যখন পারবেন না তখন তিনি বাড়িতে বসেই বিশ্রাম নেবেন।’ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে শিবানীদেবীর জীবন সংগ্রামকে কুর্নিশ জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।