বিবাহের আসরে অভিনব কিছু করা যেন হাল ফ্যাশান। চিরাচরিত রীতি ভেঙে নতুন কিছু করে যুগলরা সমাজের বৃহত্তর অংশে নতুন বার্তা দিতে চান। তবেই তো মুহূর্তের মধ্যে সেই বিবাহ নেটিজেনদের আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। বর্ধমানের মেয়ে শ্রেয়া ঘোষালের বিয়ের অনুষ্ঠান যেন ঠিক একই বিষয়ের উপস্থাপন ঘটাল। বিয়ে দিলেন মহিলা পুরোহিতরা। নারী এবং পুরুষ উভয়ই সমান, এই বার্তা দিতেই বৈদিক বিবাহ রীতিতে বদল এনে বিয়ের আসর মাতালেন বর্ধমানের এই কন্যা। তিনি কর্মসূত্রে ব্যাঙ্গালোরে থাকেন। উত্তরপ্রদেশ নিবাসী মানবেন্দ্র সিংহ রাঠোরের সঙ্গে নিজের বাকি জীবনটা কাটানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন যে সন্ধ্যায়, সেদিন যেন এক ইতিহাস তৈরী হল।
বিবাহের জন্য মহিলা পুরোহিতদের এনে বিয়ের আসরে রীতিমতো নারী পুরুষের সমতার বার্তা দিতে চাইলেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে বর্ধমান শহরেই জাঁকজমকভাবে শ্রেয়া ঘোষালের সাথে উত্তরপ্রদেশের পাত্রের বিবাহ আসর বসে। সেখানে মহিলা পুরোহিতরা বিয়ে দিলেন এই যুগলের। বিয়েতে কোনও কন্যাদানের বালাই ছিল না। বরকে প্রদক্ষিণ করেন কনে। সেই নিয়মও ছিলনা। এমনকি পান পাতায় মুখ ঢাকা নয় কন্যার। এখানে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় চাল দিয়ে কনেকে বলতে হয় না, বাবা-মায়ের সব ঋণ শোধ করলাম। নতুন বউকেও বর বলেন না, আজ থেকে তোমার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিলাম। বিয়ে মানেই যেখানে সানাইয়ের সুরে গমগম করে চারদিক, সেখানে এই বিয়েতে শোনা যায় পছন্দ মতো সঙ্গীত। বিয়ের মন্ত্রপাঠেও থাকে অভিনবত্ব। সংস্কৃতের পাশাপাশি বাংলা বা ইংরেজি ব্যবহার করা হয়।
সমাজে নারী পুরুষের সাম্য বজায় রাখতে বৈদিক মতের বিবাহ বাড়ছে সমাজে। এদিন এমনই বিয়ের সাক্ষী থাকল বর্ধমানবাসী। কলকাতার মহিলা পুরোহিত রোহিনী ধর্মপালের তত্ত্বাবধানে এমনই বিয়ে এখন নতুন সংজ্ঞা বয়ে আনছে সমাজে। সমাজ ভাবনার বদল আনতে বৈদিক নিয়মকেই প্রাধান্য দিলেন এই নব দম্পতি। নারী-পুরুষের বিভাজন অহরহ কুসংস্কারাচ্ছন্নতা বাড়াচ্ছে বলেই মনে করেন রোহিনীদেবী। তিনি বলেন, বৈদিক বিবাহের রীতি অনুসারে নারী ও পুরুষ সমান। এখানেও এই সমাজে প্রচলিত সেই ভাবনা পরিবির্তিত হচ্ছে। নতুন ভাবনায় উঠে আসছে সাম্য বজায় রাখার প্রয়াস। এদিনের বিবাহে কন্যা পানপাতায় মুখ ঢেকে ছিলেন না। এখানে নারী ও পুরুষ একই সঙ্গে বিয়ের মণ্ডপে আসেন। এমনকি আগুনের চারিদিকে সাত পাকে ঘুরেছেন দম্পতি, সেখানে পুরুষ এবং নারী দু’জনেই সমানভাবে সামনে এবং পিছনে ঘুরেছেন।
পাত্রী শ্রেয়া ঘোষাল বলেন, বিদায়, কন্যাদানের মত বিষয়গুলি সত্যিই এখন খুব অপ্রাসঙ্গিক। তাই এগুলোর বাইরে গিয়ে অন্যভাবে বিয়ে অনুষ্ঠানের ইচ্ছা ছিল। ‘পুরোনোতুন বৈদিক বিবাহ’ মহিলা পুরোহিত গোষ্ঠীর কথা জানতে পেরে যোগাযোগ করি মহিলা পুরোহিতদের সঙ্গে। ওঁনাদের পরামর্শেই ওঁনাদের তারিখ নিয়েই বিয়ের অনুষ্ঠান করার চিন্তা ভাবনা শুরু করি। পাত্র মানবেন্দ্র জানান, খুবই ভালো লাগছে। সমাজের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত। এদিন তারই দৃষ্টান্ত তৈরি হল।