বর্ধমান শহরের ভাতছালা, জোড়া কালিতলা, বাবুপুকুরের পাড় ও গোলাহাট এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙে মধুর শিস গানে। সকাল হতেই সুন্দর শিসের গান শুনতে শুনতে ঘুম ভাঙা এই এলাকার বাসিন্দারা কার্যতই চমকে গিয়েছিলেন – যেদিন তাঁরা দেখেন ‘শিস খোকন’কে। বিগত কয়েকবছর ধরে সাতসকালের এই দৃশ্য দেখতে দেখতে এখন অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে বাসিন্দাদের। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিদিনই নিত্য নতুন গান শুনতে শুনতে বিছানা ছেড়ে ওঠা বাসিন্দারা সত্যিই অবাক হয়েছেন বিরল এই প্রতিভার জন্য।
বর্ধমান পুরসভার অস্থায়ী ঝাড়ুদার ‘শিস খোকন’ ওরফে সেখ খোকন ওরফে মৌসেন আলি। অনেকেই তাঁর আসল নামই জানেন না। চেনেন শিস খোকন বা শিস খোকন হিসাবে। বাড়ি বর্ধমান পুরসভার ১৮নং ওয়ার্ডের গোলাহাট এলাকায়। ২০০৭ সালে মাত্র ৯০০ টাকার মাসিক বেতনে বর্ধমান পৌরসভার অস্থায়ী ঝাড়ুদার হিসাবে কাজে যোগ দেন তিনি। এখন তাঁর মাসিক বেতন ৭ হাজার ৫০০ টাকা। এই মাইনেতেই দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে চলে তার সংসার। সামান্য বেতনের এই কাজে সংসারে টান থাকলেও খোকনবাবু তাঁর কাজ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। আর পৌরসভার বছর পঞ্চাশের অস্থায়ী ঝাড়ুদারের শিস-গানে মুগ্ধ এখন গোটা বর্ধমান শহর।
ঝাড়ু দিতে দিতে তাঁর শিস-গান এখন সোশ্যাল মাধ্যমে ভাইরাল। শুধু ভাইরালই নয়, তাঁর এই গান আর এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এলাকাবাসীর কাছে তাঁর আবদার এখন বর্ধমানের ভাতছালা, জোড়া কালিতলা,বাবুপুকুরের পাড় ও গোলাহাট এলাকার মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। শিস খোকনের গানে মুগ্ধ শহরবাসী আবর্জনা নিয়ে খুবই সচেতন। তাই এক সময় যে এলাকা আবর্জনায় ভরে থাকতো তা খোকনের শিস গানের জাদুতে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার ‘ইঁদুরের’ মতই উধাও। এখন নিয়মকরে রোজ সকালে খোকনের শিস-গানে ঘুম ভাঙে ভাতছালা, জোড়া কালিতলা, বাবু পুকুরের পাড় ও গোলাহাট এলাকার বাসিন্দাদের। রাস্তায় ঝাড়ু দিতে দিতে মহম্মদ রফি, মান্না দে, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের একের পর কালজয়ী বাংলা ও হিন্দি গান শিস দিয়ে গেয়ে চলেন খোকন। সকাল সকাল তাঁর সেই শিস গানের সঙ্গে বাসিন্দাদের কাছে খোকনের একটাই আবদার এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। পবিত্র থাকুন।
‘শিস খোকন’ জানিয়েছেন, বাংলা হিন্দি মিলিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ টি গান অনায়াসেই শিস দিয়ে গাইতে পারেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি তাঁর একটা আলাদা ভালোবাসা রয়েছে। অভাবের সংসারে গানের তালিম না জুটলেও নিজেই গান শুনে চেষ্টা করতেন গান তোলার। সেই শুরু। অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে একদিকে যেমন পড়াশোনা হয়নি তেমনই পরিবার সামলানোর জন্য জীবিকা হিসাবে বেছে নেন ঝাড়ু দেওয়াকে। প্রতিদিনের একঘেয়েমি কাটাতে তাই তিনি বেছে নিয়েছেন তাঁর সেই প্রিয় গায়ক- গায়িকাদের কালজয়ী গানকেই। করোনার সময় কোভিড-যোদ্ধা হিসাবে কাজ করা খোকনবাবু চান সবাই ভালো থাকুক, আনন্দে থাকুক। ভালো থাকুক সমাজ, পরিবেশ। এলাকার বাসিন্দা শ্রীলা ব্যানার্জ্জী, গোপাল রায়, অনিরুদ্ধ ব্যানার্জ্জী প্রমুখরা জানিয়েছেন, এ এক বিরল প্রতিভা। পুরসভা তাঁর প্রতি নজর দিক, উন্নতি হোক শিস খোকনের এটাই তাঁরা প্রার্থনা করেন।