দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা সদ্যজাত এক শিশুর মাকে জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রাণ ফিরিয়ে দিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী মহিলাদের প্রসবের পর রক্তক্ষরণ হয়েই থাকে। কিন্তু প্রসব পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ একটি জটিল সমস্যা। প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ বা পোস্টপার্টম হেমারেজ(পিপিএইচ) বিশ্বব্যাপি মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ। এই ব্যাধির ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের পর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং অনেক সময় সঠিক চিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যুও হয়ে থাকে।
বেসরকারি হাসপাতালে এই ধরণের রোগের চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যায়বহুল। কিন্তু সরকারি হাসপাতাল যাদের একমাত্র ভরসা তাদের কাছে পিপিএইচ যথেষ্ট দুঃশ্চিন্তার বিষয়। সরকারি হাসপাতালের সীমিত পরিকাঠামোয় এই ধরণের চিকিৎসা করতে গেলে চিকিৎসকের যথেষ্ট হাতযশের প্রয়োজন হয়। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তারই এক নিদর্শন রাখলেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে সন্তান প্রসবের পর পানাগড়ের সরস্বতী রজকের প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পানাগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে রেফার করা হয়। ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে সরস্বতীকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা সরস্বতীকে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রেখে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। রোগীর শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এমভিএ(Manual Vacuum Aspiration) পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। এই পদ্ধতিতে রোগীকে অজ্ঞান করা হয় না, সজ্ঞানে অস্ত্রোপচার করা হয়।
বর্তমানে সরস্বতী ও তাঁর সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ। সদ্যজাত শিশুকে মায়ের কোল ফিরিয়ে দিতে পেরে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স সহ হাসপাতাল কর্মীরা খুশি। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ নিলাদ্রী সেন বলেন,”প্রসবের পর মহিলাদের প্রচুর রক্তক্ষরণের জটিল ব্যাধি হল পিপিএইচ। এর চিকিৎসা ব্যায়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারি পরিকাঠামোয় এই ধরণের জটিল রোগের চিকিৎসা করে রোগীকে সুস্থ করে তুলতে পেরে আমরা সকলেই খুব আনন্দিত। বর্তমানে মা ও শিশু দু’জনেই সুস্থ।” দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা বলেন,”রাজ্য সরকারি চিকিৎসকদের এই ধরণের সফলতা মানুষকে ভরসা দেবে।”